স্পোর্টস ডেস্ক :
অবশেষে ঘোষণাটা দিয়েই ফেললেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জানিয়ে দিলেন আর অধিনায়ক থাকছেন না। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেটিই হবে অধিনায়ক হিসেবে তার শেষ ম্যাচ।
গুঞ্জন ছিল আগেই। তবে কোনো কিছুই পরিষ্কার ছিল না। কেননা মাশরাফি নিজে বলেননি, বোর্ডের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করে বলা হয়নি এই সিরিজই হবে অধিনায়ক মাশরাফির শেষ।
এবার মাশরাফির মুখ থেকেই এলো ঘোষণাটা। সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেটিই হবে আমার অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ।’ তবে নেতৃত্ব ছাড়লেও সুযোগ পেলে জাতীয় দলে খেলাটা চালিয়ে যেতে চান মাশরাফি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজ শুরুর আগেই অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলতে শুরু করে মাশরাফির ভবিষ্যৎ। তবে সিরিজের জন্য দল ঘোষণার আগে হঠাৎ করেই বিসিবিতে উপস্থিত হয়ে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তখন জানিয়ে দিয়েছিলেন, অধিনায়ক হিসেবে জিম্বাবুয়ে সিরিজই হচ্ছে মাশরাফির শেষ।
কিন্তু বিসিবি সভাপতির এই ঘোষণার পরও চলতে থাকে নানা গুঞ্জন। মাশরাফির কি সত্যিই অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজই শেষ? নাকি আরও কিছুদিন অধিনায়কত্ব করবেন তিনি।
কিছু কিছু কারণে বোঝা যাচ্ছিল, মাশরাফিকে হয়তো আরও কিছুদিন অধিনায়ক হিসেবে রেখে দিতে পারে বিসিবি। এছাড়া সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে এ বিষয়ে মাশরাফিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তখনও তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। মাশরাফি তখন জানিয়েছিলেন, অধিনায়কত্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত। আমার ভাবনার বিষয় নয়।
তবুও সবাই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে কি তবে কোনো ঘোষণা চলে আসবে? লাক্কাতুরা চা বাগান সংলগ্ন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স হলে মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনটি তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি নিজের অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ ঘোষণা করার সময়ই খোলাসা করে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে। বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই তিনি প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন।
প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করার আগে মাশরাফিকে দেখা গেলো উইকেটের মাঝে দাঁড়িয়ে অনেক্ষণ কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর সঙ্গে কথা বলছেন। প্রায় ৭-৮ মিনিট হতে। সঙ্গত কারণেই ভাবা হচ্ছিল যে, কোচের সঙ্গে আলাপ করেই হয়তো অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু মাশরাফি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, কোচের সঙ্গে অবসর কিংবা অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি অবসরের সিদ্ধান্তটা হুট করেই নিয়েছি এবং সেটা বিসিবি সভাপতিকর সঙ্গে কথা বলে।’
কখন বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছেন, সেটাও জানালেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘টিম বাসে ওঠার আগে, হোটেল থেকে মুঠোফোনে আমি পাপন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি মনে করি, যেহেতু অধিনায়কের দায়িত্বটা সব সময় বোর্ড নির্ধারণ করে এবং বোর্ডই আমাকে অধিনায়কের গুরু দায়িত্ব দিয়েছিল। তাই অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটাও বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আলাপ করেই নিয়েছি এবং তাকেই সবার আগে জানিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসে চেয়ারে বসার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই মাশরাফি নিজ থেকে বলে ওঠেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি কিছু কথা বলতে চাই। অধিনায়ক হিসেবে কালকেই আমার শেষ ম্যাচ। এত লম্বা সময় আমার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। ধন্যবাদ জানাই আমার সাথে যত খেলোয়াড় খেলেছে তাদেরকে। আমি নিশ্চিত মাঝের সময়টা এত সহজ ছিলো না, গত ৫-৬ বছরের যাত্রাটা। আমি ধন্যবাদ জানাই টিম ম্যানেজম্যান্টকে, যাদের অধীনে আমি খেলেছি। তারা সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।’
অধিনায়কত্ব শুরুর সময়টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দিয়ে। এর আগেও পেয়েছিলাম; কিন্তু ইনজুরির কারণে সেভাবে করতে পারিনি। হাথুরুসিংহেকে দিয়েই শুরু এরপর খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস আর (রাসেল) ডোমিঙ্গো…, নির্বাচক ও বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন, বোর্ডের প্রতিটি স্টাফ, সবাইকে ধন্যবাদ সহযোহিতার জন্য। মিডিয়ার যারা আছেন, সবাই সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সবশেষে সমর্থকেরা, যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ। আপনাদের সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না (এতদুর আসা)।’
এরপর সঙ্গে করে আনা লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মাশরাফি, ‘আজকে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য।’