কৃষকের ফসল রক্ষার যুদ্ধ জড়িয়ে রয়েছে তার ফসল রক্ষার যুদ্ধের সঙ্গে। বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কৃষক তার ফসল রক্ষা করে। ফসল রক্ষার যুদ্ধ কৃষকের রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে। কিন্তু বৈরী প্রকৃতির কাছে কৃষককে মাঝেমধ্যে পরাজিত হতে হয়। দেশের হাওরাঞ্চলের কৃষককে অকালবন্যায় ফসল হারাতে হয়। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই হাওরাঞ্চলের জমি উঁচু ভূমির আগেই বন্যায় তলিয়ে যায়। এবার সুনামগঞ্জ জেলায় ৭৪৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। সব প্রকল্পে ৬৩৩.৬৯ কিলোমিটার বাঁধের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২৮.৮৪ কোটি টাকা। গতবারের বেশির ভাগ বাঁধই অক্ষত থাকার পরও এবার প্রকল্প ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে প্রশাসন আয়োজিত বাঁধের অগ্রগতিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় কৃষক নেতারা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। গত ১৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা থাকলেও এই সময়ে এসে তা শেষ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ প্রকল্পেই এখন পর্যন্ত কম্পেকশন ও দূর্বা ঘাস লাগানো হয়নি। কোথাও আবার কাজই শুরু হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, বরাম হাওরের একাধিক প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস দেখা দিয়েছে। ওই হাওরের ছাটাখাউরিতে পাশাপাশি দুটি বাঁধে নিম্ন মানের কাজ হচ্ছে। জামালগঞ্জের লালুরগোয়ালা বাঁধের কাজ এখনো অর্ধেকও হয়নি। বাঁধের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর প্রকল্পের কাজও সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকরা বলছে, বেশির ভাগ বাঁধেই গোড়া থেকে মাটি তোলার কারণে শুরু থেকেই বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃষ্টি হলে বা পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা এসব বাঁধ সামলাতে পারবে না বলে মনে করে কৃষকরা। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের অভিযোগ, এবার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ অপচয়ের মচ্ছব চলছে।
হাওরাঞ্চলকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে বড় শস্যভাণ্ডার। দেশে সবচেয়ে বেশি বোরো ফসল উৎপাদন হয় এই এলাকায়। কিন্তু এই এলাকাকে ঘিরেই অতীতে দেখা গেছে কৃষি তৎপরতায় অবহেলা ও ব্যবস্থাপনার অভাব। কোনোভাবেই যেন অকালবন্যা কিংবা পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসল নষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। হাওরের সব বাঁধ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেরামত করতে হবে। কৃষকদের অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।