উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো পরিপূরক হওয়া উচিত – প্রধানমন্ত্রী

7
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলিভেটেড সিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিংক এর হাতিরঝিল অংশের পুন:এলাইনমেন্ট এর উপস্থাপন অবলোক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আমরা যখন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করি, সে উন্নয়ন কাজগুলো একটি আরেকটির পরিপূরক হওয়া উচিত। একবার পরিকল্পনা (উন্নয়ন প্রকল্পগুলো) গৃহীত হলে সেগুলো সংহত করা এবং একে অপরের পরিপূরক হতে হবে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিঙ্কের হাতিরঝিল অংশের পুনর্এলাইমেন্টের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা অবলোকনকালে একথা বলেন। উপস্থাপনাটি অবলোকনের পর প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে করা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নক্সায় তাঁর সম্মতি প্রদান করেন, যা পলাশীতে কাঁটাবন হয়ে বিয়াম (বিআইএএম) ভবনের দক্ষিণ অংশে হাতিরঝিল লেকের প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নতুন নক্সা অনুযায়ী তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে (কুতুবখালী) পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার মূল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালী পয়েন্ট পর্যন্ত মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, লিঙ্ক ও র‌্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার হবে।
পূর্ববর্তী প্রস্তাবে হাতিরঝিল লেক এবং পান্থকুঞ্জের মাঝামাঝি বরাবর এই লিঙ্কের এ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লেক (হাতিরঝিল) এবং পান্থকুঞ্জকে সুরক্ষা করে নতুনভাবে নক্সা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই সংযোগের ফলে পুরাতন ঢাকা এবং ধানম-ির বাসিন্দারা উপকৃত হবেন এবং এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের নতুন বিন্যাস অনুসারে, সোনারগাঁও-বুয়েট লিঙ্কের হাতিরঝিল অংশটি হাতিরঝিলের দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত বিআইএএম ভবনের নিকটবর্তী এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত হবে এবং সোনারগাঁও-বুয়েট লিঙ্কটি পান্থকুঞ্জ ও কাঁটাবন হয়ে পলাশীতে গিয়ে শেষ হবে।
অনুষ্ঠানে হাতিরঝিলসহ অন্য জলাশয়গুলো রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে বিভিন্ন সময় রাজধানীর জলাশয়গুলো ধ্বংস হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মতিঝিলে বড় একটি ঝিল (জলাশয়) ছিল, কিন্তু পাকিস্তানী শাসক আইয়ুব খান তা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পান্থপথে বক্স কালভার্টের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, বক্স কালভার্টকে ধ্বংস করে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল হতো।
ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমরা নগরীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রামে দিচ্ছি। ফলে গ্রামের মানুষের রাজধানীমুখী প্রবণতা কমে আসছে। সরকারী কর্মকর্তাদের শহরে বসবাসের মানসিকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারী কর্মকর্তারা এখন শহরে থাকতে চান। তাদের বদলি করা হলে পরিবারকে শহরে রেখে নিজেরাই কেবল কর্মস্থলে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অতীতে জেলার স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়েছে, কেননা মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারী কর্মকর্তাগণ জেলায় থাকতেন।
জনগণের ট্রাফিক আইন মেনে না চলার মানসিকতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস থাকার পরও জনগণ রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে, পথচারী এবং চালক কেউই ক্রসিং মানছেন না। এটা ঠিক নয়।
যোগাযোগবিদ ও বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক অনুষ্ঠানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিঙ্কের হাতিরঝিল অংশের পুনর্এলাইনমেন্ট প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং প্রকল্পের স্থপতি সদস্য ইকবাল হাবিব এ সময় প্রকল্প সম্পর্কে তাদের অভিমত প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও’র এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রকল্প পরিচালক এএইচএম শাখাওয়াত আকতার ও সেতু বিভাগের সচিব মোঃ বেলায়েত হোসেন এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের সংশোধিত স্থাপত্য নকশা দেখেন শেখ হাসিনা। নকশা দেখার সময় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। নকশা উপস্থাপন করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আরা অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।