সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৮ হাজার ৮৩২টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের সাত হাজার ১৮টি পদ এবং সহকারী শিক্ষকের ২১ হাজার ৮১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের মামুনুর রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সারাদেশে ডিসেম্বর-২০১৯ পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মোট শূন্য পদ সাত হাজার ১৮টি। আর সহকারী শিক্ষকের মোট শূন্য পদ ২১ হাজার ৮১৪টি। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য মতে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ চার হাজার ১৬৬টি পদ পদোন্নতিযোগ্য। আর ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার ৮৫২টি পদ সরাসরি নিয়োগযোগ্য।
প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, সহকারী শিক্ষকের ১৮ হাজার ১৪৭টি শূন্য পদে নিয়োগে নির্বাচিত প্রার্থীদের নামে নিয়োগপত্র জারি করা হয়েছে। শিগগিরই তারা যোগদান করবেন।
প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, সরাসরি নিয়োগযোগ্য ৩৫ শতাংশ পদে নিয়োগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে (পিএসসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে, আদালতে মামলা থাকায় প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তারপরও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত শিক্ষক পদে এক লাখ ৭৯ হাজার ৭১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। ২০১০ সালে ঝরে পড়ার হার ৩৯ দশমকি ৮ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করেছে।
সরকারি দলের বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ভালো ও পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ রয়েছে, এমন ৭৮৩টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২ হাজার ৬৬৭টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, এক হাজার ৪১১টি কম্পিউটার ল্যাব, ৩১টি ডিজিটাল ল্যাংগুয়েজ ল্যবরেটরি, ৬৪০টি আইসিটি লার্নিং সেন্টার এবং ৫০টি ক্লাস্টার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আরও ৬৫ হাজার ৬০০টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশে যেসব উপজেলায় সরকারি বিদ্যালয় ও কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজকে সরকারি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ২৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩০২টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে।
কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে শিক্ষা দানের জন্য ২০১৮–২০১৯ অর্থবছরে ৬৫ হাজার ৮৫১ জন শিক্ষককে সৃজনশীল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের মীর মোস্তাক আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছরই বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে সারা দেশে ৪৪ লাখ জনকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সে হিসাবে পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের মধ্যে সব ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স্ক পুরুষ এবং ৬২ বা তদূর্ধ্ব বয়স্ক নারীকে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
সরকারি দলের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী আরও জানান, চলতি ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ হাজার ৬৯৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।