কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন আতঙ্কিত তখন এর সঙ্গে সূর্যগ্রহণের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী ২১ জুন বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে। ভারতের এক বিজ্ঞানী দাবি করে বসেছেন, এই গ্রহণের সঙ্গে করোনা সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে। তার দাবি, এই গ্রহণের পর করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
তবে জ্যোতির্বিদরা বলছেন, সূর্যগ্রহণের সঙ্গে ভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের দাবি এই ধারণা একেবারেই অমূলক। সৌরজগতের নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সঙ্গে ভাইরাস বাড়া বা কমার কোন সম্পর্ক নেই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মানুষ কবে মুক্তি পাবে এই সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার কিছুকাল পরেই কমে আসতে পারে। তবে করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তারচেয়েও বেশিদিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ হারে নাও থাকতে পারে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত। সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত ৮০ লাখ মানুষ। ইউরোপ-আমেরিকা- এশিয়া-আফ্রিকায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। ঠিক এমনি সময়ে ভারতীয় বিজ্ঞানী কেএল সুন্দর কৃষ্ণ এক অদ্ভূত দাবি করেছেন। যা শোরগোল ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। তিনি দাবি করেছেন, গত বছরের শেষে সূর্যগ্রহণের পর যে শক্তি নিঃসরণ হয়েছিল তা থেকেই ভাইরাসের জন্ম হয়েছে।
তার মতে, এই ভাইরাস পৃথিবীতে নয়, মহাজাগতিক অবস্থানে তৈরি হয়েছে। বায়ুমন্ডলের উচ্চতর স্তরে এর সৃষ্টি। এই ভাইরাসের জন্ম প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে। গত বছরের শেষে হওয়া সূর্যগ্রহণের সময় যেভাবে এর উৎপত্তি হয়েছে, ঠিক সেভাবেই জুন মাসের ২১ তারিখ সূর্যগ্রহণের মাধ্যমেই এর তীব্রতা কমে আসবে। তার দাবি, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আগামী ২১ জুন রবিবার যে সূর্যগ্রহণ হবে তা থেকে যে শক্তি নির্গত হবে, সেটাই এই ভাইরাসকে দুর্বল করে দেবে।
জ্যোতির্বিদরা জানিয়েছে, আগামী রবিবার ২১ জুন বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হবে। এই সূর্যগ্রহণকে বলা হয় ‘রিং অব ফায়ার’। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রিং অব ফায়ার আংশিকভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যাবে।
তারা জানায়, ২১ জুন সকাল ৯টা ৪৬ মিনিট ৬ সেকেন্ডে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইম্পফোন্ডো শহরের আকাশে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় গ্রহণ শুরু হবে ১০টা ৪৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে কঙ্গোর বোমা শহরের আকাশে। সর্বোচ্চ গ্রহণ ঘটবে ভারতের যোশীমঠ শহরে ১২টা ৪০ মিনিট ৬ সেকেন্ডে। কেন্দ্রীয় গ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৩১ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে ফিলিপিন্সের সামার শহরে। সূর্যগ্রহণ শেষ হবে বিকেল ৩টা ৩৪ মিনিটে ফিলিপিন্সের মিন্দানাও শহরের আকাশে। তবে এই গ্রহণের প্রভাবে করোনা সংক্রমণ কমবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অপরপক্ষে করোনাও অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্ক চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এ দেশে সংক্রমণের হার মোকাবেলা করা কঠিন। দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয়- রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া, নানা সামাজিক সমস্যা, রোগবালাই, অপুষ্টির কারণে অনেকের মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন-জীবিকার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের কিছুকাল পরই করোনা সংক্রমণের উচ্চ হার কমে আসতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তারচেয়েও বেশিদিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ হারে নাও থাকতে পারে।