বাংলাদেশ ব্রেক্সিট-এ তীক্ষ্ম দৃষ্টি

15

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া। গত ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে একদিকে ব্রেক্সিটপন্থীদের উল্লাস, উদ্যাপন, আর অন্যদিকে বিরোধীদের শঙ্কা ও উদ্বেগের ভেতর দিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথম কোনো দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়লো যুক্তরাজ্য। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট থেকে বেরিয়ে গেল তারা। ছিন্ন হলো ৪৭ বছরের বন্ধন। ব্রেক্সিটপন্থী ও বিরোধীরা যুক্তরাজ্যজুড়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলেও আয়ারল্যান্ড কিংবা স্কটল্যান্ডের প্রবল আপত্তি আছে ব্রেক্সিটে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে হয়েছে ব্রেক্সিটবিরোধী বিক্ষোভ। ইইউতে থাকতে চাওয়া স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে হয়েছে মোমবাতি প্রজ্বালন; লন্ডনের পার্লামেন্ট চত্বরে নেচে-গেয়ে উল্লাস করেছে বিচ্ছেদের সমর্থকরা।
ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কী কী পরিবর্তন লক্ষণীয় হবে? বিবিসি পরিবেশিত খবরে বলা হচ্ছে, যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ নয়, কাজেই ইউরোপের মূলভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণহীন অভিবাসন আর হবে না, ইইউয়ের তহবিলে যুক্তরাজ্যকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা দিতে হবে না, যুক্তরাজ্য কোন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে তার ওপর ব্রাসেলসের খবরদারি থাকবে না। যুক্তরাজ্যের আইনের ওপর থাকবে না ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের কর্তৃত্ব। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকার সময়ে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে পারত না। বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, এখন ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছে, নিজের বাণিজ্যনীতি ঠিক করার স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপের নানা দেশের নাগরিকের সংখ্যা লাখ লাখ। তেমনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক বাস করে। ব্রেক্সিটের কারণে ২০২১ সাল থেকে এই মানুষদের নিয়ে বহু ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা ও ঝামেলা তৈরি হতে পারে।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী নতুন এক বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশকেও কিছুটা সতর্ক হতে হবে। কারণ ব্রেক্সিটটি এমন একসময় ঘটেছে, যখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগোচ্ছে। তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধরন পাল্টাতে পারে। ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস আছে। এটি ঘটলে বাংলাদেশের পণ্যের তৃতীয় প্রধান এই রপ্তানির গন্তব্যে বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় কমার আশঙ্কা আছে বলে মনে করে অনেকে। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন সহায়তা কমাতে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি ইইউ ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশ পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এিটাই আমাদের প্রত্যাশা।