পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত নজরদারি করুন

21

 

বাজারে সব ধরনের জিনিসের দাম চড়া। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮.৫৭ শতাংশ। সে হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১.২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯.৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে শহরের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯৯ শতাংশ। এ অবস্থায় রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক কমিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর আলাদা প্রজ্ঞাপনে এসব পণ্যের শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
গত ৮ ফেব্রæয়ারি চালের আমদানি শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক কমানো হয় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল এক হাজার ৫০০ টাকা।
আর খেজুর আমদানিতে শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমানোর পর বাজারে এসব পণ্যের দাম কি আদৌ কমবে? এখন পর্যন্ত বাজারে দাম কমার ল²ণ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
ওদিকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশের জন্য ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সীমিত আকারে পেঁয়াজ রপ্তানির ব্যাপারে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর দেশের পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। তবে খুচরা দামে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। শুল্ক পুনর্র্নিধারণ হওয়ায় ভোজ্য তেলসহ কিছু পণ্যের দামও যৌক্তিক পর্যায়ে নামবে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এই আশ্বাস দিয়েছেন যে রোজায় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে। মজুদদার ও বাজার কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অনেক সময় ভোক্তার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়। শবেবরাতের কয়েক দিন আগে থেকে খাদ্যপণ্য বিক্রি বাড়ে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এই চাহিদা সামনে রেখে কম দামে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে কিনেছেনÑএমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। তবে কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করা হলে এই কারসাজি রোধ করা সম্ভব। আবার এটাও ঠিক যে বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রত্যাশা, সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ থেকে বাজারে নিয়মিত নজরদারি করা হবে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হবে টিসিবির আওতা।