কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের বিস্তারের কারণে চীন থেকে যেসব বাংলাদেশি দেশে ফিরতে ইচ্ছুক তাদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ফিরতে ইচ্ছুকদের পরিমাণ জেনে দুই এক দিনের মধ্যেই সঠিক ধারণক্ষমতার বিমান নির্ধারণ করতে পারবেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে লেখেন, চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সেখান থেকে ফিরে আসতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কতজন আসবেন তা নির্দিষ্ট হওয়ার পর সেখানে পাঠানোর জন্য বিমান নির্ধারণ করবে সরকার।
তবে আগ্রহীদের দেশে ফেরানোর এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত চীনে যারা আছেন, তাদের সেখানকার সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।
এদিকে সরকারের প্রস্তুতি থাকলেও চীনের নিষেধাজ্ঞা কারণে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান থেকে এখনই বাংলাদেশিদের ফেরানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তবে দেশে ফিরতে চান, এমন ব্যক্তিদের জন্য বিমান প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে চীন থেকে যেসব বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চান, তাদের আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে ১৪ দিন পর্যন্ত উহানে কাউকে প্রবেশ কিংবা চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে যেতে দেবে না স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘সার্স ভাইরাসের ভেকসিন আবিষ্কার করতে ‘জিন সিকুয়েন্স’ থেকে মানবদেহে পরীক্ষা করতে সময় লেগেছিল ২০ মাস। করোনাভাইরাসের ‘জিন সিকুয়েন্স’ ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা (রয়টার্স জানিয়েছে আজকে)।’
‘ভ্যাকসিন তৈরি করে তা মানবদেহে পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ সর্বমোট সময় লাগবে ৩ মাস যার মধ্যে এক মাস প্রায় পার হয়ে গেছে। সার্স এর পরে চীন এই সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে যার প্রভাব আমরা দেখছি সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থায়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই কথাগুলো তাদের জন্য যারা খুব শংকার মধ্যে আছেন চীনে। ঘরের মধ্যেই এক নাগাড়ে থাকতে বলাটাই একধরনের ‘কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থা। ১৪ দিন সর্বোচ্চ, যার মধ্যে কম বেশি সাত দিন পার হয়ে গেছে।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কী ধরনের বিমান আমরা পাঠাব তা জানতে চেয়েছে চীন। যারা ফিরতে চান তাদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে গেছে। আমরা দুই এক দিনের মধ্যেই সঠিক ধারণ ক্ষমতার বিমানটি নির্ধারণ করতে পারবো ফিরে আসতে চাওয়া মানুষের সংখ্যার মাধ্যমে।’
চীন বসবাসকারীদের দেশটির সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো যে কয়েকটা দিন ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে সেই সময় পর্যন্ত চীন সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা কোন ব্যতিক্রম ছাড়া মেনে চলার জন্য।’
‘এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু নিজের জীবনের স্বার্থে এবং ভাইরাসটি যেন তাদের কারও মাধ্যমে না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে চীনের স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলতেই হবে।’
প্রতিমন্ত্রী তার তার ফেসবুক পেজে আরও লিখেছেন, ‘আমি আরও অনুরোধ করবো বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের যেন চীনে থাকা তাদের আত্মীয়দের তারা এই বার্তাটি পৌঁছে দেন এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করেন।’
ঢাকার পক্ষ থেকে চীনে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে সার্বক্ষণিক বিষয়টি তদারকি করছেন জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছেন। আমরা ঢাকা থেকে দূতাবাসের কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করছি এবং তদারকি করছি।’