নানা ঘটনায় হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য ইমেজ সঙ্কটে পুলিশ

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। ইমেজ সঙ্কটে ফেলছে হাতে গোনা কয়েক পুলিশ সদস্য। খুন-গুম-ঘুষ-ধর্ষণ-নির্যাতনসহ নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। গত বছর সারাদেশে দশ সহগ্রাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যকে গুরুদন্ড ও লঘু দন্ড দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। গত ৫ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে পাঁচ শতাধিক ফৌজদারি মামলা। বর্তমানে পাঁচ সহগ্রাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সোমবার খোদ রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা হেফাজতে এফডিসির কর্মকর্তা আবুবক্কর সিদ্দিকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি। এ নিয়ে আবারও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। পুলিশ হেফাজতে কোন মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না পুলিশ এই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, খুন-গুম-ঘুষ-ধর্ষণ-নির্যাতনসহ নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। বিদায়ী বছরে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের ঘুষ কেলেঙ্কারি, ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে থানার ওসি মোয়াজ্জেমের সংশ্লিষ্টতা, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শাশুড়িকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কনস্টেবল অসীম ভট্টাচার্য গ্রেফতার এবং গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইজাদুর রহমানকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়ার অভিযোগে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করাসহ সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনায় গোটা পুলিশ বিভাগকে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ করে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার হওয়া এফডিসির কর্মকর্তা আবুবক্কর সিদ্দিক। তার শরীরে কালো দাগ দেখা গেছে। এছাড়া মাথায় ও পায়ে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে এ তথ্য জানান ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার। ময়নাতদন্ত করেন ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ। এদিকে তার সহকর্মীরা এফডিসিতে দিনভর বিক্ষোভ প্রতিবাদ শেষে এক সমাবেশে শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আলী আজমের ফাঁসি দাবি করেছেন।
একইদিন রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, থানায় আসামির মৃত্যুর দায় পুলিশ এড়াতে পারে না।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) দুই সদস্যকে পুলিশ কর্তৃক মোটরসাইকেল চাপা দেয়ার পর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও পিষে ফেলার হুমকি দিয়েছে পুলিশ। এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। গত সোমবার পরীবাগ এলাকায় বাংলা ট্রিবিউনের ক্রাইম রিপোর্টার শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আলোকিত বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার সাজ্জাদ মাহমুদ খানকে মোটরসাইকেল চাপা দেয় পুলিশ। এরপর সাংবাদিকদ্বয়ের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। এর কয়েক দিন আগে বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আসাদুজ্জামান শিমুলকে রড দিয়ে পেটায় সন্ত্রাসীরা। এই দুই ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশটির আয়োজন করে ক্র্যাব।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের মধ্যে যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে তা খোদ পুলিশ বিভাগের তৈরি পরিসংখ্যানেই পাওয়া যায়। পুলিশের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নানা ধরনের ছোট বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিমাসে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তার কম বেশি গুরু দন্ড বা লঘু দ-ের সাজা হচ্ছে। প্রতিবছর গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার পুলিশের সাজা হচ্ছে।
এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সাজা হয়েছে সহগ্রাধিক। ইন্সপেক্টর, এএসপি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার প্রায় অর্ধশত জনের বেশি সাজা পেয়েছেন। পুলিশের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর শুধু যে বিভাগীয় মামলায়ই সাজা হচ্ছে তাই নয়, কঠোর অপরাধের বিচারের জন্য পুলিশ বিভাগ থেকেই অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের বিভিন্ন অপরাধের কারণে অভিযোগ জমা পড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৫ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৫ শতাধিক ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে।