সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান ॥ আপনারা আমাদের শত্রু নয়

15

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কারও প্রেসক্রিপশন ও নির্দেশনায় চলে না বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। দুদকের কোনও দুর্নীতি খুঁজে পেলে তা প্রকাশ করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, দুদকের দুর্নীতি পেলেও আপনারা তা জানাবেন। আমাদেরও ভুল আছে। সিদ্ধান্তের ভুল হয়। অনেক সময় খারাপ কাজ করে ফেলি। আমরা চাই না, আমাদের কারণে নিরীহ মানুষ ভোগান্তির শিকার হোক।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান ও প্রশিক্ষণ ও আইসিটি মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু বুঝি সেটুকু নিয়ে কাজ করি। ক্যাসিনো কাণ্ডের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধান থেমে থাকবে না।
তিনি বলেন, দুদক সকল পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরতে তৎপর রয়েছে। তবে চুনোপুটি দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সাংবাদিকদের পরেই আমাদের সব থেকে বড় তথ্যের উৎস হলো হট লাইন নাম্বার ১০৬। আমাদের এই হট লাইন নাম্বারটি যেন বেশি প্রচার পায় সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন।
নববর্ষ ও মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পিছনে প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। এই দুর্নীতির মাত্রা যতটা কমিয়ে আনা যায়, সেটাই হবে মুজিববর্ষে আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম কাজ।
তিনি বলেন, মানুষ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ মন বিশ্বাস করে। এমনকি শিশুরা সংবাদপত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। আমার মনে হয় সংবাদপত্রের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব দেশের প্রতি। কোনও সংবাদ যেন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না করে এই দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। শুধু সংবাদপত্র নয় আমাদের সকলের কর্মপ্রক্রিয়া সর্বপ্রথম থাকা উচিত দেশ, তারপর আপনি, আমি, আমরা সবাই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কমিশন কে বড় কে ছোট এমন কিছু বিবেচনা না করে নির্মোহভাবে পথ চলছে, অনেকটা অন্ধের মতো। গত প্রায় চার বছরে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা পিছপা হইনি। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি, এ সময়ে কারো দ্বারা প্রভাবিত হইনি। যা করেছি নিজের বিবেক-বিবেচনা বোধ থেকেই করেছি।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে আপনার যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনও দোষ-ত্রুটি খুঁজে পান তা নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করবেন। জনগণকে জানাবেন। কারণ দুদক জনগণের প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিক ছাড়া দুদকের অস্তিত্ব দৃশ্যমান নয়। আপনারা আমাদের শত্রু নন বরং সহযোগী বা সহযাত্রী। আমাদের সমালোচনা করা হলেও আমারা আপনাদের শত্রু ভাবি না। বরং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ইতিবাচকভাবে সমালোচনাকে গ্রহণ করি।
তিনি বলেন, ক্যাসিনো কাণ্ড নিয়ে অনেক কথা হয়। ক্যাসিনো ব্যবসা কিন্তু দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তবে ক্যাসিনো ব্যবসা করে যে বা যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, সেটা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। ঠিক এ কারণেই আমরা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এসব তথ্যেরও সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে সংবাদপত্র, অন্য কোনও সংস্থা নয়। আমরা আমাদের এই কর্মপ্রক্রিয়া থামাবো না। এটা চলবে। দুর্নীতিপরায়নদের যতক্ষণ না পর্যন্ত আইন আমলে আনতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদেরকে তাড়া করবো।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বর্ষে আসুন, আমরা আমাদের যার যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।