কাজিরবাজার ডেস্ক :
বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ আজ। বাংলাদেশ সময় সকাল আটটা ৩০ মিনিটে শুরু হবে গ্রহণ। তবে বাংলাদেশ থেকেই এই গ্রহণ প্রত্যক্ষ করা যাবে সকাল নয়টা ৩৪ মিনিটে। সর্বোচ্চ গ্রহণ হবে এগারোটা ১৮ মিনিটে। বাংলাদেশে গ্রহণ শেষ হবে বেলা একটায়। বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফ আর সরকার বলেন, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে এটি পরিষ্কার দেখা যাবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদের ছায়া পড়ে সূর্যের চারদিকে গোল রিংয়ের মতো দেখায় বলে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। তবে বাংলাদেশ থেকে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ সম্পূর্ণ দেখা যাবে না। গ্রহণের আংশিক দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন এফ আর সরকার। তিনি বলেন, এই বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ মূলত শুরু হবে সৌদি আরবের রিয়াদের কাছাকাছি। এরপর তা যুক্তরাজ্য, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া পোলেনেশিয়ার গুয়াম দ্বীপে গিয়ে এটি শেষ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে এটি দেখা যাবে। তবে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ যেটা হবে তা বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না। আংশিক সূর্যগ্রহণ বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে বাংলাদেশ সময় সাড়ে আটটায় এই বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। শেষ হবে দুপুর দুটা ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে হবে। তারা জানান, বাহরাইনের উরায়ারারের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ সময় সাড়ে আটটায় সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় গ্রহণ সম্পন্ন হবে ফিলিপাইন্স সাগরে ওয়েক দ্বীপের পশ্চিম দিকে বারোটা ৫৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে। আর সর্বোচ্চ সূর্যগ্রহণ হবে মালাক্কা প্রণালীতে রূপাথ দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এগারোটা ১৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে।
সৌরজগতে আজ সকালে যে জাগতিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। এ ধরনের সূর্যগ্রহণে সাধারণত চাঁদের কৌণিক ব্যস সূর্যের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। এ কারণে গ্রহণের সময় সূর্যের চারদিকে লাল রিংয়ের মতো দেখা যায়। চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন সূর্য কিছু সময়ের জন্য আংশিক বা সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। এ ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। সাধারণত অমাবশ্যার পরে নতুন চাঁদ ওঠার সময় এ ঘটনা ঘটে। পৃথিবীতে প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে পাঁচটি সূর্যগ্রহণ হয়।
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে চন্দ্র গ্রহণের চেয়ে সূর্যগ্রহণ বেশি হয়। প্রতি সাতটি গ্রহণের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের অনুপাত ৫:২ বা ৪:৩। তবে সূর্যগ্রহণ সমুদ্রপৃষ্ঠ বা পর্বতমালার ওপর দিয়ে গেলে সাধারণত মানুষের নজরে পড়ে না। জনাকীর্ণ লোকালয়ের ওপর দিয়ে গেলেই যন্ত্রপাতি দিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায়। এই সুযোগ বিজ্ঞানীরা নিজ নিজ বিষয়ে গবেষণা সুযোগ পান। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন সূর্যের সাধারণ অবস্থায় সাধারণত এর আলোকম-ল দেখা যায়। কিন্তু সূর্যের ছটাম-ল, আবহম-ল, ক্রোমোস্ফিয়ার দেখা যায় না। শুধু সূর্যগ্রহণেই তাদের ছটা দেখার সুযোগ আসে। তারা বলছেন ১৮৬৮ সালের ১৮ আগস্টের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় ভারতের মানমন্দির থেকে প্রথম আবহাওয়ায় হিলিয়ামের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অথচ এর আরও ২৭ বছর পর পৃথিবীতে হিলিয়াম আবিষ্কার হয়। সূর্যের অভ্যন্তরে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬৫.৭ কোটি টন হাইড্রোজেন সংযোজিত হয়ে ৬৫.২৫৬ কোটি টন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা সূর্যের শক্তির উৎস। ১৯১৯ সালের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় ব্রিটেনের রয়্যাল এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি আলোর যে ভর মাধ্যাকর্ষণের বেশি আকর্ষিত হয়, এ বিষয়ে আরও পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাজিলের সরোবন ও গিনি উপসাগরের প্রিনসিপ দ্বীপে দুটি গবেষণাদল পাঠানো হয়। গবেষণার মাধ্যমে আইনস্টাইনের বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণ মেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে এখনও অনেক কুসংস্কার আছে। এ সময়ে খেতে নেই, তৈরি করা খাবার ফেলে দিতে হয়। আবার গ্রহণ দেখাও অনেকের কাছে নিচ্ছি। সূর্য গিলে খাওয়া রাহুর ভয়ে সাধারণত এমনটি করা হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে এসবের কথার কোন ভিত্তি নেই।