কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের আওতাধীন গত ১ বছরে প্রায় ৭০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে করে গ্রাহকরা নতুন ট্রান্সফরমার ক্রয় করতে ২২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং পল্ল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান হয়েছে ২০ লাখ টাকা। গ্রাহকদের এত ক্ষতি হলেও ট্রান্সফরমার চোর চক্রকে আইনের আওতায় আনতে না পারায় দিন দিন চুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পল্ল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্ল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির অন্তর্ভুক্ত কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের নিয়ন্ত্রণে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া উপজেলার ২৪ শত কি. মি. বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩৫০টি গ্রাম। গ্রাহক সংখ্যা ৯৫ হাজার উপরে। বিভিন্ন গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখতে স্থাপিত পল্ল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির খুঁটিতে রয়েছে ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি ধারণ সম্পন্ন ট্রান্সফরমার। এই ট্রান্সফরমারগুলো এখন আর নিরাপদে নেই। তামা জাতীয় মূল্যবান কয়েলের লোভে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে ট্রান্সফরমার চোর চক্র। চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই শুধু চুরি হয়েছে ৭টি ট্রান্সফরমা। এভাবে প্রতিনিয়ত চোরচক্র রাতের আধাঁরে গ্রাম থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর হতে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার আদমপুর, কান্দিগাৗ, চিৎলয়া, যোদ্ধাপুর, গোপালনগর, তিলকপুর, নয়াপত্তন, ধর্মপুর, জালালপুর, রাজকান্দি, নছরতপুর, ছয়ছিড়ি, যুগিবিল, বাসুদেবপুর, সিদ্বেশরপরু পুথিমপাশা, পুটটিবি, কাজীগাঁ হাসানপুর, পাল¬াকান্দিনর্তন, কর্মদা, তিলীশিজুড়া, হাজীপুরসহ প্রায় ৩৫টি গ্রাম থেকে ৫ কেভি ১১টি, ১০ কেভি ৩৫টি, ১৫ কেভি ২১টি ও ২৫ কেভি ৩টি মোট ৭০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ৩৫টি গ্রামের প্রায় ৭০টি ট্রান্সফরমার এর মূল্য প্রায় ৪৩ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। আর এই টাকা যোগান দিতে গ্রাহকরা পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি। কারণ ৫ কেভি ট্রান্সফরমা মূল্য ৩৮ হাজার ১৮ টাকা, ১০ কেভির মূল্য ৫৯ হাজার ৭৬০ টাকা, ১৫ কেভির মূল্য ৭২ হাজার ২২৪ টাকা এবং ২৫ কেভি ট্রান্সফরমারে মূল্য ৯৯ হাজার ৫৩১ টাকা নির্ধারণ রয়েছে। গ্রাহকরা চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমার সমিতির নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। আর কারণেই ওই গ্রামগুলোর গ্রাহকরা চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমা কিনতে হয়েছে। ট্রান্সফরমারর মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে কোন কোন গ্রামের গ্রাহকরা গরু, ছাগল বা সুদে বা অন্য কিছু বিক্রি করে টাকা যোগাড় করেছেন।
পল¬ী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ হতে চুরি রোধে গ্রাহকদের সচেতনতামূলক লিফলেট ও মাইকিং করার পাশাপাশি খুঁটিতে লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং দিয়ে ট্রান্সফরমার মোড়ানোর জন্য উদ্ধুদ্ধ করলেও কোন কাজ হচ্ছে না। চোরচক্র রড কেটে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে নিয়মিত ট্রান্সফরমার চুরিরর ঘটনা বাড়ছে। পল¬ী বিদ্যুৎ এর কমলগঞ্জ জোনাল অফিস হতে ট্রান্সফরমার চুরি হলে থানায় মামলা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। তাদের অভিযোগ পুলিশ ট্রান্সফরমার চোরদেরকে আটক করতে না পারায় চুরি বাড়ছে।
কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইদানিং কালে ট্রান্সফরমার চুরি বেড়ে গেছে। এতে করে সমিতি ও গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোররা যাতে চুরি করতে না পারে সেজন্য সমিতির পক্ষে থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি, লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং করে ট্রান্সফরমার রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, বিগত সময় ট্রান্সফরমার চুরির সাথে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। বর্তমানে চুরির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।