ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বিবৃতি ॥ বিএনপির আমলে দশ হাজার সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে বিএনপির মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বুধবার সংগঠনের কেন্দ্র ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন ‘বিএনপি কখনও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেনি।… বিএনপির আমলে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে… বরং সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ আমলে যত নিপীড়ন হয়েছে, তা আর কখনও হয়নি’ ইত্যাদি। আমরা বিএনপি নেতার এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা করছি।
গণমাধ্যমে পাঠানো নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং পরবর্তী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিরোধী দলের নেতাকর্মী, মুক্ত চিন্তার বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর যে নৃশংস নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেছে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এর কোন নজির নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রথম ১ হাজার ৫০০ দিনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সম্পর্কে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত তিন খ-ের শ্বেতপত্রে প্রায় তিন হাজার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে উচ্চতর আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচারপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কমিশনের শ্বেতপত্রে ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘনের প্রায় দশ হাজার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সময় সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রায় তিন লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাবার জন্য প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল, যাদের ভেতর আড়াই লাখের অধিক পরবর্তীকালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ আমলে সংখ্যালঘু নির্যাতন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে, যেসব ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটেছে বর্তমান সরকার তা অস্বীকার না করে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিএনপির সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুক্তভোগী পূর্ণিমা, আদুরি, রাধারানীসহ শত শত নারী এখনও বেঁচে আছেন সাক্ষী দেয়ার জন্যÑ একথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্যাতন করে সে ঘটনা অস্বীকার করা আরও বড় অপরাধ, যা নির্যাতকদের অধিকতর নির্যাতনে উৎসাহিত করে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন সম্পর্কে এ ধরনের মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা। একই সঙ্গে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলা হয়, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেনÑ বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কর্র্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), ডাঃ আমজাদ হোসেন, সমাজকর্মী নূরজাহান বোস, ড. নূরন নবী, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, সাংবাদিক, চলচ্চিএ নির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, সমাজকর্মী খোন্দকার আবদুল মালেক শহীদুল্লাহ, ড. ফরিদা মজিদ, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, এ্যাডভোকেট খন্দকার আবদুল মান্নান, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাঃ ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ, এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, সমাজকর্মী আক্কাস হোসেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম, অধ্যাপক আবদুল গফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মুক্তিযোদ্ধা কাজী লুৎফর রহমান, সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এ্যাডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, সঙ্গীতশিল্পী জান্নাত-ই ফেরদৌসী লাকী, সাংবাদিক শওকত বাঙালি, উপাধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, সমাজকর্মী সরদার জাকির হোসেন খসরু, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী শম্পা, লেখক আলী আকবর টাবী, অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, সমাজকর্মী চন্দন শীল, এ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, ডাঃ মামুন আল মাহতাব, শহীদসন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শহীদসন্তান শমী কায়সার, শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী স্বীকৃতি বড়ুয়া, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক সুজিত সরকার, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, এ্যাডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু, সমাজকর্মী মোঃ আমিনুর জামান রিংকু, এডভোকেট মালেক শেখ, সহকারী অধ্যাপক তপন পালিত, সমাজকর্মী পূর্ণিমা রাণী শীল, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ ও সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল।