কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ওপর গণশুনানি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) থেকে এই গণশুনানি শুরু করবে কমিশন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)সহ ছয়টি বিতরণ কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুনানি শেষে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে মূল্যের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ পাওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের গণশুনানিতে অংশ নিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও বাম সংগঠন আগ্রহ দেখিয়েছে। পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও আবেদন করেছেন। এরমধ্যে আছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ পোশাক শিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এছাড়া, বিভিন্ন সংগঠনও আগ্রহ দেখিয়েছে। কমিশন জানায়, কেউ চাইলে সরাসরি এসেও শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।
কমিশন সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পিডিবির প্রস্তাবিত পাইকারি মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি হবে। এরপর দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রস্তাবিত সঞ্চালন মূল্য হার পরিবর্তন নিয়ে শুনানি হবে।
১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত মূল্যের ওপর শুনারি। প্রথমদিন ১ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১০টায় শুরু হবে পিডিবির গ্রাহক পর্যায়ের মূল্য হার পরিবর্তনের ওপর শুনানি। একইদিন দুপুর ২টায় শুরু হবে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) শুনানি। ২ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এবং দুপুরে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) শুনানি হবে। এরপর ৩ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এবং দুপুরে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহক পর্যায়ের মূল্য হার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের অক্টোবরে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য পরিবর্তনের আবেদন করে পিডিবি। গত ২৩ অক্টোবর তারা এই আবেদন কমিশনের কাছে জমা দেয়। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবে পিডিবি বলছে, ২০২০ সালে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হতে পারে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময় প্রয়োজন হবে ৪৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ফলে বাকি আট হাজার ৬০৮ কোটি টাকা পূরণের জন্য মূল্য সমন্বয় করতে কমিশনকে অনুরোধ করে পিডিবি।
অন্যদিকে, ক্যাপাসিটি পেমেন্টের যে হিসাব, তাতে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালে ২০ হাজার ৩১ কোটি টাকা হবে সম্ভাব্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। পিডিবি আগামী বছরজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্ভাব্য ঘাটতি দেখিয়েছে আট হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কিছুটা কমানো গেলেই বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে হবে বলেও পিডিবি যুক্তি দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের আবেদন জমা দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি শুনানিতে যেসব অভিমত পাওয়া যাবে, সেগুলোও যুক্ত করে কমিশন আদেশ দেবে।
এরআগে, ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়। তখন গড়ে ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা বা পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ হারে মূল্য বাড়ানো হয়। যা একই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। কিন্তু ওই সময় পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়নি। ২০১৫ সালে সর্বশেষ পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।