কাজির বাজার ডেস্ক
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করেছে। এবার সর্বোচ্চ ১৩ দিন মাঠে থাকবে কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আর সর্বনিম্ন ৫ দিন থাকবে পুলিশ। তবে প্রয়োজন হলে পুলিশ বাহিনীকে আরও বেশি দিন মাঠে রাখবে ইসি। তবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সব বাহিনীর সদস্য সর্বোচ্চ ১৩ দিন মাঠে থাকবেন। কেউ ৫ দিন, কেউ ৬ দিন, এভাবে সর্বোচ্চ ১৩ দিন পর্যন্ত থাকবেন। ভোটের আগে-পরে আনসার থাকবে ৬ দিন, পুলিশ ৫ দিন (প্রয়োজনে বাড়ানো হবে), বিজিবি ও কোস্ট গার্ড থাকবে ১৩ দিন, র্যাব ৫ দিন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে ১৩ দিন। অশোক কুমার দেবনাথ আরও বলেন, সবার আগে নির্বাচনের মাঠে নামবে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। ভোটের আগের ১০ দিন থেকে ভোটের দিন, ভোটের পরের দুদিনসহ মোট ১৩ দিনের জন্য এই দুই বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন।
ইসি জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার, ২ হাজার ৩৫০ জন কোস্ট গার্ড, ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি, ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সব মিলিয়ে এই পাঁচ বাহিনীর ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। ইসির দেওয়া তথ্যমতে, বাহিনীগুলো নির্বাচনী দায়িত্ব পালন এবং যাতায়াত খরচ বাবদ এরই মধ্যে মোট ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা চেয়েছে পুলিশ। অশোক কুমার দেবনাথ জানান, বিভিন্ন বাহিনী আগাম বরাদ্দ চেয়েছে। কমিশন সবকিছু পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবে।
হলফনামায় যেসব তথ্য দিতে হবে : সংসদ সদস্য পদে প্রার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটসহ উত্তীর্ণ পরীক্ষার নাম, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে নিরক্ষর বা সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন কিংবা প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করতে হবে। প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কি না, থাকলে তার রায় কী ছিল, তা উল্লেখ করতে হবে। তবে পুরোনো মামলার ক্ষেত্রে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়ে গেছে বা খালাস পেয়েছেন অথবা অনেক আগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এমন ক্ষেত্রে বিশদ তথ্য না দিতে পারার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে না। দÐিত হয়ে থাকলে এবং সহজলভ্য তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ না করার বিষয় প্রমাণিত হলে মনোনয়নপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ইসির এক পরিপত্রে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া হলফনামায় বিস্তারিতভাবে পেশার বিবরণী, আয়ের উৎস, আয়কর রিটার্ন, প্রার্থীর নিজের এবং নির্ভরশীল অন্যদের সম্পদ ও দায় বিবরণী উল্লেখ করতে হবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থী একক বা যৌথভাবে কিংবা প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল সদস্যের নেওয়া ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণসংক্রান্ত তথ্যও সঠিকভাবে হলফনামায় দিতে হবে।
নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর মনোনয়নপত্রের নির্ধারিত স্থানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি হলফনামা দাখিল না করেন বা দাখিল করা হলফনামায় কোনো অসত্য তথ্য দেন কিংবা তথ্য গোপন করেন বা হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যের সমর্থনে যথাযথ প্রমাণাদি দাখিল না করেন, তাহলে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে।
প্রার্থীর তথ্য ভোটারদের মাঝে প্রচারের নির্দেশ : প্রার্থীরা হলফনামায় যেসব তথ্য দেবেন, সেগুলো ভোটারদের মাঝে প্রচারের জন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে হাটবাজারে বা অন্য জনাকীর্ণ স্থানে লিফলেট আকারে এবং জনাকীর্ণ স্থানে সেগুলো প্রচার করতে বলা হয়েছে। হলফনামার তথ্য ইসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে।
এদিকে ভোট গ্রহণ দেখতে অন্য দেশ থেকে যেসব অতিথি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক আসবেন, তাঁদের জন্য সব কিছু সহজ করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। বিমানবন্দরে হেল্প ডেস্ক চালু থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর, হোটেলে একটি হেল্প ডেস্ক স্থাপন করব, যেন বিদেশি অতিথি, পর্যবেক্ষকেরা বিমান থেকে নেমে খুব সহজে সার্বিক তথ্য পেয়ে যেতে পারেন। তাঁরা যেন ইমিগ্রেশন ক্রস করে নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছাতে পারেন, সেসব বিষয় সেখান থেকে দেখা হবে। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী কীভাবে নিয়োজিত থাকবে, সার্বিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগতদের মধ্যে কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁদের চিকিৎসাব্যবস্থা কীভাবে হবে, সেগুলো নিয়ে আমরা একটি রূপরেখা তৈরি করেছি।’