হলি আর্টিজান মামলার রায় ২৭ নভেম্বর ॥ জঙ্গি হামলা করেছে নব্য জেএমবি ॥ ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আদালত বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে আগামী ২৭ নভেম্বর। রবিবার আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে এই দিন ধার্য করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান। ২০০৯ সালের এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মাধ্যমে হত্যার অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান অনুযায়ী দন্ডিত হবে জঙ্গিরা। এই মামলায় ২১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়। অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। অপর ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানকালে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে ৮। অভিযোগপত্রে (চার্জশীটে) বলা হয়েছে, জঙ্গি হামলা করেছে জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালায় তারা। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল করা’ এবং বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ওই বছরের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ’১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হয়েছিল ভয়াবহ ওই হামলা। হামলাকারীরা ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। নিহতরা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। নব্য জেএমবি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় হামলা চালিয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে এই হামলার ছক কষেছিল বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। নজিরবিহীন ওই হামলা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে দলটির শীর্ষনেতাদের বেশ কয়েকজন মারা পড়ে। এই হামলায় জড়িত হিসেবে যে আটজনকে জীবিত গ্রেফতর করা হয়, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় হামলার পর এসআই রিপন কুমার দাসের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে। জীবিত গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলো- জাহাঙ্গির আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। রবিবার রায়ের তারিখ ঘোষণার সময় এই আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। এর আগে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার সময় তারা সবাই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। এই মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। হলি আর্টিজানে হামলার আগে জঙ্গিরা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া বাজার এলাকার কলেজ মোড়ে একটি বাসায় মিটিং করে প্রথমে তারা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
তিন বছর আগের এই জঙ্গি হামলার ঘটনার মামলায় আট আসামির যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন মামলার আইনজীবীরা। এরপর ফের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি খন্ডন করেন। এরপর রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন বিচারক। তিন বছর আগে জঙ্গি হামলার ঘটনা দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে শুরু হয় জিরো টলারেন্স নিয়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে জঙ্গিবাদশূন্য করা হয়, যা এখনও অব্যাহত। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের চার দিনব্যাপী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রবিবার মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৭ নবেম্বর তারিখ ধার্য করে আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করে আসছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। ২০১৮ সালের ২৬ নবেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দী নেয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়। হলি আর্টিজান বেকারি কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত থাকায় সেখানে হামলা করার পেছনে কারণ ছিল জঙ্গিদের নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দেয়া। এছাড়া বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি তারা এর মাধ্যমে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে চেয়েছিল।
গুলশান হলি আর্টিজান মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয় ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে ৮ আগষ্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। একই বছরের বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেয়। এরপর ৩০ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র গ্রহণ ও আসামিদের উপস্থিতির জন্য আদালত এ দিন ধার্য করে। জঙ্গি হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী যিনি বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।