স্পোর্টস ডেস্ক :
‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরে অন্য দিনগুলোর চেয়ে মঙ্গলবার ছিল আলাদা। আগের দু’দিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে তেমন দর্শক দেখা না গেলেও এদিন দুপুরের ম্যাচ থেকেই ছিল বিপুল দর্শক উপস্থিতি। কারণ এদিন দুই ম্যাচে সাকিব, পোলার্ড, রাসেল, জাজাই, রুবেল, স্টিভেন স্মিথ, এভিন লুইস, শহীদ আফ্রিদি, ক্রিস গেইল, তামিম ও রাইলি রুশোদের মতো মহাতারকাদের উপস্থিতি। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল অনেক বড় মাপের। কিন্তু সব আলো কেড়ে নিয়েছেন রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। উল্লেখ্য, তারকারা ব্যর্থ হলেও নড়াইল এক্সপ্রেসের বিধ্বংসী বোলিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারতে হয়েছে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। মাশরাফি যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্রিকেটে সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়ে ১১ রানে ৪ উইকেট নিলে আগে ব্যাট করা কুমিল্লার ইনিংস থমকে যায় মাত্র ৬৩ রানে। স্বল্পরানের এই লক্ষ্যটা ৪৮ বল হাতে রেখে ১২ ওভারে ১ উইকেটে ৬৭ রান তুলে টপকায় রংপুর। ফলে হার দিয়ে আসর শুরু করলেও গত আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর টানা দুই জয় তুলে নিল। আর কুমিল্লা প্রথম ম্যাচ জিতলেও এবার পরাজয়ের মুখ দেখল।
ক্রিকেটপ্রেমীদের এবং রংপুরের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে মঙ্গলবার। বিপিএলের শুরুতেই বাংলাদেশে আসলেও নানাবিধ জটিলতায় খেলতে পারেননি গেইল, তিনি রংপুরের একাদশে নামেন কুমিল্লার বিপক্ষে। তবে দর্শকদের অপেক্ষা আরও বেড়ে যায় মাশরাফি টস জিতে আগে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোয়। অধিনায়ক হিসেবে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে একমাত্র মোকাবেলার পর অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে এটি তার দ্বিতীয় সাক্ষাত। সেবার টসের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় দলের সেই টি২০ যুদ্ধে ম্যাচও জিতেছিলেন স্মিথ। এবার শুরুতেই টস জেতার পর মাশরাফি বল হাতেও ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেন। ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই তিনি দারুণ লাইন-লেন্থে বল ফেলে দুই আক্রমণাত্মক ওপেনার তামিম ও এভিন লুইসকে উইকেটে আটকে রাখেন। রান করতে না পারার আক্ষেপ আর অস্বস্তিকর আক্ষেপে শেষ পর্যন্ত দু’জনই মাশরাফির শিকারে পরিণত হন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তামিমকে (৪) শিকার করার পর চতুর বোলিংয়ে তিনি পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে সাজঘরে ফেরান লুইসকেও (৮)। ওই ওভারেরই দ্বিতীয় বলে ওয়ানডাউনে নামা ইমরুল কায়েসকে (২) শিকার করে রীতিমতো কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের জন্য সাক্ষাত আতঙ্কে পরিণত হন মাশরাফি। তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইনিংসের শুরুতেই বিপর্যস্ত কুমিল্লা ধুঁকতে থাকে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ না পাওয়া কুমিল্লাকে আরেকটি আঘাত উপহার দেন পেসার শফিউল ইসলাম। ষষ্ঠ ওভারে তিনি পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শোয়েব মালিককে কোন রান করার আগেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে আটকে ফেলেন।
মূর্তিমান আতঙ্ক মাশরাফি সপ্তম ওভারে ব্যক্তিগত স্পেলের শেষ ওভারে এসেও আঘাত হানেন। এবার তার শিকার কুমিল্লার অধিনায়ক স্মিথ। আগের ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছিলেন, ফিরে গিয়েছিলেন ১৬ রানে। এবার তাকে শূন্য হাতে সাজঘরে ফিরে আসতে হয়। এক থেকে চার নম্বর ব্যাটসম্যানই মাশরাফির আগুন বোলিংয়ে পুড়ে খাক হয়েছেন। মাশরাফি তার স্পেল শেষ করেন ৪-১-১১-৪ বিশ্লেষণ নিয়ে। যে কোন পর্যায়ের টি২০ ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয়বার ৪ উইকেট শিকার। এর আগে ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেলফাস্টে ২০১২ সালের ২১ জুলাই। এবার ক্যারিয়ারসেরা টি২০ বোলিং নৈপুণ্য দেখালেন। ১৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা কুমিল্লা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি পরে নাজমুল ইসলাম অপুর ঘূর্ণি বোলিংয়ের তোপে। ৭ নম্বরে নেমে আফ্রিদিই শুধু ১৮ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ২৫ রানের একটি ভাল ইনিংস খেলেছেন বলে বিপিএলে সর্বনি¤œ রানের লজ্জাজনক রেকর্ড এড়িয়েছে কুমিল্লা। ১৬.২ ওভারে ৬৩ রানে গুটিয়ে যায় তারা। এটি বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বনি¤œ দলীয় ইনিংস। অপু ২০ রানে নেন ৩ উইকেট।
মামুলি এক লক্ষ্যকে রংপুর তাড়া করতে নামলেও গেইলকে দেখে উৎসাহে চিৎকার দিয়েছিলেন দর্শকরা। কিন্তু গেইল হতাশ করেন সবাইকে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে পেসার আবু হায়দার রনির স্টাম্পের বাইরে পড়া লাফিয়ে ওঠা বলকে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয়ের গ্লাভসবন্দী হন মাত্র ১ রানে। এরপরই দর্শকরা মাঠ ত্যাগ করতে শুরু করেন। আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ ওপেনার মেহেদী মারুফ এদিন ৩৯ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ে নামলেও এদিন সে সুযোগ হয়নি, তবু রুশো ২৮ বলে ২০ রানে অপরাজিত থেকেছেন ওয়ানডাউনে নেমে। ১২ ওভারে ১ উইকেটে ৬৭ রান তুলে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় রংপুর।
স্কোর : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস- ৬৩/১০; ১৬.২ ওভার (তামিম ৪, লুইস ৮, ইমরুল ২, স্মিথ ০, মালিক ০, বিজয় ২, আফ্রিদি ২৫, সাইফউদ্দিন ৭, মেহেদী ৬, রনি ৫, শহীদ ০*; মাশরাফি ৪/১১, সোহাগ ০/৭, শফিউল ২/৮, অপু ৩/২০, ফরহাদ ১/১১, হাওয়েল ০/৬)।
রংপুর রাইডার্স ইনিংস- ৬৭/১; ১২ ওভার (গেইল ১, মারুফ ৩৬*, রুশো ২০*; রনি ১/১১, মেহেদী ০/২২, শহীদ ০/১০, আফ্রিদি ০/১৬, সাইফউদ্দিন ০/৩, স্মিথ ০/৪)।
ফল : রংপুর রাইডার্স ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : মাশরাফি বিন মর্তুজা (রংপুর রাইডার্স)।