কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও নিয়ে তুঘলকি সব কাণ্ড বেরিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে অবশেষে সজাগ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যুদ্ধাপরাধী, জিয়াউর রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নামের বহু প্রতিষ্ঠান, অর্থ লেনদেন, অস্তিত্বহীন এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি নিয়ে বিতর্কের মুখে প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। এদিকে এমপিওভুক্তির পর এবার নীতিমালা সংশোধনে গঠন করা হয়েছে ১০ সদস্যের কমিটি।
জানা গেছে, দীর্ঘ নয়বছর পর বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও নিয়ে একের পর এক অস্বচ্ছ ও অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে। একে একে বেরিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধী, জিয়াউর রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নামের বহু প্রতিষ্ঠান, অর্থ লেনদেন, অস্তিত্বহীন এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তুঘলকি সব ঘটনা। ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান’ নামেরই চারটি প্রতিষ্ঠানের এমপিও দিয়ে সঠিক ইতিহাসকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে।
ইতোমধ্যেই এমপিও পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রী সভার সদস্য ও সরকার দলীয় এমপিদের ডিও লেটারে (চাহিদাপত্র) প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি না হলেও নামসর্বস্ব, অস্তিত্বহীন, একাডেমিক স্বীকৃতিবিহীন, ট্রাস্ট পরিচালিত, যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপি নেতাদের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা কীভাবে এমপিওভুক্তি হলো- তা নিয়ে হচ্ছে সমালোচনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অন্তত ২১টি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা পেয়েছে।
নীতিমালার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারী শিক্ষকরা। এমপিওর দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এসেছে আপত্তি। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
যদিও প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রণালয়ের যেসব অসাধু কর্মকর্তার কারণে এমপিওতে অনিয়ম হয়েছে তাদের হাতেই তালিকা যাচাই-বাছাই ও নীতিমাল সংশোধনের দায়িত্ব দিলে তার ফল ভাল হবে কিনা?
বুধবার নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল ও কলেজের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সাত সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম ফারুককে। ২০ কর্মদিবসের মধ্যে তারা যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবে। গত ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত এমপিও তালিকায় স্থান পাওয়া এক হাজার ছয়শ পঞ্চাশটি স্কুল ও কলেজের তথ্য যাচাই করবে এই কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।
জানা যায়, এর আগে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য গত বছরের আগষ্টে আবেদন করে নয় হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। এরমধ্যে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়া হয়। তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বঞ্চিত ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে।
নীতিমালা অনুযায়ী চার শর্ত পূরণকারী প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রতিষ্ঠানের বয়স বা স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। প্রতিটি পয়েন্টে ২৫ করে নম্বর থাকে। কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং স্বীকৃতির বয়স পূরণ করলে শতভাগ নম্বর দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর পাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়।
এদিকে ২০১৮ সালের বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনে ১০ সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
এমপিওভুক্তির পর তা নিয়ে বিতর্ক তোলে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। এমপিওভুক্তির শর্ত নিয়ে বেসরকারী শিক্ষকরা আন্দোলন করার পর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছিলেন, নীতিমালা হালনাগাদ ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, হালনাগাদ নীতিমালায় এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের বিষয়ে শর্তের ভিন্নতা থাকবে। ডিগ্রী স্তরে শর্ত শিথিলেরও ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী।
নীতিমালা পর্যালোচনায় কমিটির কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (মাধ্যমিক)। এছাড়া কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি, বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) একজন প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডের একজন প্রতিনিধি, নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়কে। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিবকে (বেসরকারী মাধ্যমিক-৩)।