৮৮তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ রণজিত দাস, ক্রীড়াঙ্গনের এক কিংবদন্তীর কথা

9

মোস্তাক আহমেদ

রণজিত দাস, এদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যেন এক রূপকথার রাজপুত্র। ৫০, ৬০ ও ৭০ দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল ও হকি দলের নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন অনন্য অসাধারণ এই গোলরক্ষক। ২৯ অক্টোবর ৮৮তে পা দিচ্ছেন এই ফুটবল কিংবদন্তী। কিন্তু মনে প্রাণে এখনো এক টগবগে যুবক তিনি। এখনো স্বপ্ন খেলা করে তাঁর চোখের পাতায়। আর ফেলে আসা সোনালী অতীত যখন স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ে তখন তাঁর দুরন্ত যৌবন টগবগিয়ে ওঠে, ফিরে ফিরে আসে মাঠ কাঁপানো সূবর্ণ দিনগুলো। এ যেন এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। কীর্তিমান এই পুরুষ দেশের জন্য অনেক সুনাম বয়ে এনেছেন। ক্রীড়াঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ। তাঁর সময়ে তিনিই সেরা ছিলেন গোলবারের নিচে। পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে টানা দশ মৌসুম খেলেছেন। এর মধ্যে ছয়বার পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে গোলবার আগলে রেখেছেন। খেলেছেন অল-ইন্ডিয়া আই এফ শিল্ড, অল-ইন্ডিয়া ডুরাল্ড কাপ, অল-ইন্ডিয়া লোকপ্রিয় বারদলৈ ট্রফি, আগাখান গোল্ডকাপ, ঢাকা ১ম বিভাগ ফুটবল লীগ সহ অসংখ্য টুর্নামেন্ট। ঢাকা মোহামেডান স্পোটির্ং ক্লাব, ত্রিপুরা একাদশ, ইন্ডিয়ান ক্লাব, শিলচর, কোলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ইস্পাহানি স্পোর্টিং ক্লাব সহ উপমহাদেশের নামি-দামি অনেক ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ক্রীড়াঙ্গনের এই আলোকিত মানুষ। ১৯৫৬-৫৮ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে তাঁর নেতৃত্বে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ফুটবলের পাশপাশি পাকিস্তান জাতীয় হকি চ্যাম্পিয়নশিপে টানা পাঁচ মৌসুম পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে হকি খেলেন। উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে হকিতে পূর্ব পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় হকি চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেন ক্রীড়াঙ্গনের এই মহানায়ক। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয় উদ্যোগে গঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাফুফের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় সিলেটের কৃতি সন্তান রণজিত দাসকে। এ ব্যাপারে রণজিত দাস বলেন, তাঁর কমিটিই সেই সময় প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফার সদস্য পদ লাভের জন্য আবেদন করেন এবং পরবর্তীতে ফিফা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে অসংখ্য ক্লাব ও ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন করেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের জন্য অগনিত পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন জীবন্ত এই কিংবদন্তী। তার মধ্যে গ্রামীণ ফোন-প্রথমআলো-২০০৬ এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার-২০০৭ উল্লেখযোগ্য।
সিলেটের জিন্দাবাজারে জন্ম নেয়া রণজিত দাসের অখন্ড অবসর কাটে পাঠানটুলা করেরপাড়াস্থ নিজ বাসা কমলাকান্ত ভবনে। চার কন্যা ও এক পুত্রের জনক এই মহান ক্রীড়াবিদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী এখন স্ত্রী রেখা দাস ও এক বছরের নাতনি প্রাচী।
বাংলাদেশ ফুটবলের এই দুঃসময় রণজিত দাসকে খুব ভাবায়। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের লাগাতার ব্যর্থতায় তিনি মর্মপীড়া অনুভব করেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভূটানের সাথে বাংলাদেশ ফুটবল দলের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এক সময়ের তুখোড় এই ফুটবলযোদ্ধা। তিনি বলেন, তোমরা বার বার ব্যর্থ হচ্ছো কারণ তোমাদের চোখে কোন স্বপ্ন নেই। কোন কিছু জয় করতে হলে তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নের বীজ বুনতে হবে মনে। ফুটবলের চিরসবুজ এই স্বপ্নবাজ পুরুষ এখনো স্বপ্ন দেখেন দেশের ফুটবল নিয়ে। তাঁর এই স্বপ্ন আমাদের নতুন প্রজন্মকে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাবে যুগযুগ ধরে। কিংবদন্তী ফুটবলার রণজিত দাসের ৮৮তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি আর অফুরান ভালোবাসা রইলো।