মৌলভীবাজারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ॥ ধর্মীয় সংহতি-সম্প্রীতির যুগান্তকারী পদক্ষেপ

39

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সরকার ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ চালু করেছে। ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্প। প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক শিক্ষা ও গীতা শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা প্রকল্পের প্রধান কাজ। এছাড়া নিরক্ষরতা দূরীকরণে, বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তিতে এবং ঝড়ে পড়া রোধ করতে প্রকল্পটি কাজ করছে। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের সফল বাস্তবায়নের পর ৫ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে।
মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদের অক্ষর জ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষা দানের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা, শরীরচর্চা ও ধর্মীয় চর্চার সুযোগ রয়েছে। ধর্মীয় চর্চা মানুষের আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনার উন্মেষ ঘটায়। আধ্যাত্মিক চিন্তা অন্তরে আদর্শ, নৈতিকতা, সততা, সহনশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোধকে জাগত করে। ৫ম পর্যায় প্রকল্পের প্রধান আকর্ষণ গীতা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। তাই মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প সমাজ থেকে সহিংসতা দূরীকরণে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। অধিকন্তু এ কার্যক্রম হিন্দুধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। প্রকল্পটি ধর্মীয় সংহতি ও সম্প্রীতির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
জানা যায়, ২০০৪ সালে এপ্রিল মাসে মৌলভীবাজার জেলায় ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ শুরু হয়। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ কে গতিশীল ও উন্নত করার লক্ষে এবং শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মৌলভীবাজার জেলায় ৭টি উপজেলায় মোট ২১৮টি শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে।
এর মধ্যে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রে পুরুষ শিক্ষক ৬৩ জন, মহিলা শিক্ষক ১৪৩ জন, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র শিক্ষক পুরুষ ৫ জন, মহিলা ১ জন, গীতা শিক্ষাকেন্দ্রে পুরুষ ২ জন ও মহিলা ৪ জন রয়েছেন।
সরেজমিন বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রে দেখা যায়, প্রতি শিক্ষাকেন্দ্রে ৩০ জন শিক্ষাথী ও ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। সাবলীল ভাষা ও দক্ষতার সাথে শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। শিশুরা জাতীয় সংগীত, ধর্মীয় বিভিন্ন মন্ত্র শিশুদের শিখানো, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিশুদের মনযোগী করা, গানে গানে ছড়া শিখানো, বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম, নৈতিকার বিকাশ, আত্ম সচেতনা মূলক বিকাশ, জ্ঞানবুদ্ধির বিকাশ ইত্যাদি শিখানো হয়। বিশেষ করে ঝরে পড়া ও পিছিয়ে পড়া শিশুদেরকে গুরুত্বসহকারে বুঝিয়ে শেখানো হয়।
বর্তমানে প্রকল্পের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি (আমার প্রথম পড়া ও সনাতন ধর্ম শিক্ষা) বই এবং বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি (আমাদের পড়ালেখা, আসুন হিসাব শিখি, আমরা শিখি ও সনাতন ধর্ম শিক্ষা) পাঠ্য বই নির্ধারিত রয়েছে। গীতা শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি করে পবিত্র গীতা সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রকল্পের অধীনে সকল শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে সকল শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মৌলভীবাজার মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা কার্যালয় থেকে নিয়মিত সুপারভাইজাররা শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে মনিটরিং করেন। পাশাপাশি প্রতি মাসে মাসিক শিক্ষক সমন্বয় সভার মাধ্যমে মাষ্টার ট্রেইনারের মাধ্যমে শিক্ষকদের কৌশল শিখানো হয়। যা শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেয়ার করতে পারেন। চলতি বছরে প্রধান কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক রনজিৎ দাস, উপ প্রকল্প পরিচালক মদন চক্রবর্তী, উপ প্রকল্প পরিচালক কাকলী রানী মজুমদার মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ ধর্মীয় নেতারা শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু থেকে শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা ছিল ৭শ’ টাকা। এর পর থেকে পর্যায় ক্রমে পরিধি বৃদ্ধি হয়। বর্তমান ৪,৫০০/- টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করা হয়। ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট করে প্রতি শিক্ষাকেন্দ্রে ক্লাস নেয়া হয়। অনেক শিক্ষকরা এ প্রতিনিধিকে বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে কর্মসংস্থাপন করে সম্মানী ভাতার মাধ্যমে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পটি স্থায়ীকরণ করে সম্মানী ভাতার পরিধি বৃদ্ধি করার দাবী জানান।
মৌলভীবাজার কার্যালয়ে সহকারি পরিচালক সুবাস চন্দ্র সরকার বলেন, গত ১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে যোগদান করার পর থেকে কয়েকটি শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। বর্তমান সরকারের সাফল্য বাস্তবায়নে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য বিশেষ উপায়ে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।