হাইকোর্টে দিন দিন বাড়ছে ডেথ রেফারেন্স মামলা ॥ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৭৫০টি মামলা ॥ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অন্যান্য মামলার পাশাপাশি সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুদন্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলা ( ডেথ রেফারেন্স মামলা)। ডেথ রেফারেন্সের বিপরীতে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মিত জেল আপীলও রয়েছে। বর্তমানে হাইকোর্টে ৭৫০টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ১৪ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের আইনবিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, হাইকোর্টে তিনটি বেঞ্চের মাধ্যমে ডেথ রেফারেন্স শুনানি হচ্ছে। আরও বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন। বিচারক সঙ্কটের কারণে এই মামলার শুনানি ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছ্।ে পাশাপাশি ডেথ রেফারেন্স ও আপীল নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত পেপারবুক তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন রকম লম্বা মুলতবি ছাড়া শুনানি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া বিশেষ বেঞ্চ বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ বিচারপতির সংখ্যা বড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যারা আপীল করেছে তাদের বিচারও দ্রুত হওয়া দরকার। বিচারপ্রার্থী, অভিযোগকারীসহ আসামিদের বয়স হয়েছে। আসামিদের যদি ন্যাচারাল ডেথ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বিচারটার যুক্তিটা থাকে না। এই আইনের স্পিরিটটা হলো দ্রুত বিচার করা । আপীল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ অন্যান্য মামলাতেও গতি ফিরে আসবে। ডেথ রেফারেন্স মামলায় সারাদেশের কারাগারের কনডেম সেলে দেড় হাজারের বেশি আসামি রয়েছে। অনেকে আছেন বছরের পর বছর ধরে।
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি বর্ষণ ও হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা। অন্যদিকে আপীল বিভাগে জেল আপীলের পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের ৩১টি মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপীলে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। যুিক্ততর্ক শেষে রায় ঘোষণার সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোনদিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া আপীল বিভাগে আমত্যু কারাবাসের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের রায়।
ডেথ রেফারেন্স প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এসব নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত পেপারবুক তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে কোন রকম মুলতবি না দিয়ে শুনানি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনও রয়েছে। অন্যদিকে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে শুধু বেঞ্চ বাড়ালে চলবে না, দক্ষ বিচারপতিরও প্রয়োজন আছে। কারণ এখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ যথানিয়মে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।
হাইকোর্টে নিষ্পত্তির পর রায়ে সংক্ষুব্ধ অনেকে আবেদন করেন আপীল বিভাগে। এর পর রিভিউ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আর রিভিউ খারিজ হলে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদন্ড। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর থেকেই ফাঁসির আসামিকে রাখা হয় কারাগারের কনডেম সেলে। সেখানে তাদের থাকতে হয় মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত বা সাজা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত ।
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা ধীরগতিতে এগুচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রীমকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, আগে দুটো বেঞ্চে ডেথরেফারেন্স মামলার শুনানি হতো। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এখন তিনটি বেঞ্চকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতির বিষয়টি প্রয়োজনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তখন হয়ত এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসতে পারে।