স্পোর্টস ডেস্ক :
টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবালসহ জাতীয় পর্যায়ের ৬০ ক্রিকেটার আপাতত ক্রিকেটীয় কোন কর্মকা- না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন সোমবার। বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে বেতন-ভাতা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা মিরপুর জাতীয় একাডেমি প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়ে। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের কোন ক্রিকেট ম্যাচ না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে অনুর্ধ-১৯ সহ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের এই ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলোচনায় বসে দ্রুতই বিষয়টির সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দ্রুতই উদ্ভূত সঙ্কটের সমাধান না হলে আসন্ন ভারত সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং চলমান জাতীয় ক্রিকেট লীগও (এনসিএল) বাধাগ্রস্ত হবে।
ক্ষোভটা অনেক দিনেরই। বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক, ভাতাদি নিয়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কর্ণপাত করেনি বিসিবি। অবশেষে ক্রিকেটাররা সংঘবদ্ধ হয়ে বিস্ফোরন্মুখ হয়েছেন। বিশেষ করে এবার এনসিএলে পারিশ্রমিক, ভাতা বাড়ানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করা এবং আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে পারিশ্রমিক কমে যাওয়ার বিষয়গুলো মানতে পারেননি ক্রিকেটাররা। ২০ বছর আগে এমনই একটি আন্দোলন করেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, হাবিবুল বাশার ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা। প্রিমিয়ার লীগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে ১৯৯৮ সালের শেষদিকে তারা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন এবং মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে ম্যাচ খেলেননি সেরা ক্রিকেটাররা। কয়েক বছর আগে আরেকটি আন্দোলনে নেমেছিলেন কিছু ক্রিকেটার ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে প্লেয়ার্স ড্রাফট পদ্ধতি চালু করাতে। তবে তা বড় কিছু হতে পারেনি ক্রিকেটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকায়। এমনকি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) দ্বিধান্বিত অবস্থানে তা বড় হয়নি। এবার বিষয়টি ভিন্ন। এবার ক্রিকেটাররা যে একজোট হয়েছেন তা সোমবারের ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে। কারণ, ক্রিকেটাররা উল্টো কোয়াবের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ চেয়েছেন এবং নিজেদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ চেয়েছেন।
মূলত সাকিবের নেতৃত্বেই ক্রিকেটাররা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জানুয়ারিতে এবং সেই প্রস্তুতির জন্য তাদের বেশকিছু কার্যক্রম থাকায় তাদের এই আন্দোলনে রাখা হয়নি। বাকি বয়সভিত্তিক দলগুলোকেও আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এবারও এনসিএলে পারিশ্রমিক ম্যাচ ফি হিসেবে ৩৫-৪০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে, দৈনিক খাবারের ভাতা ১৫০০, যাতায়াত ভাত ২৫০০, সাধারণ বাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা অটুট। অনেক আগেই প্লেয়ার্স ড্রাফটের প্রণয়ন করে প্রিমিয়ার লীগে (ডিপিএল) ক্রিকেটারদের আয় সঙ্কোচনক করা হয়েছে, অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ব্যতীত বাকিরা ট্রেনার, ফিজিও বছরজুড়ে পাননি এবং অনুশীলন সুবিধাও অপ্রতুল। এই বিষয়গুলো বাড়ানোর দাবি নিয়ে এনসিএলে পারিশ্রমিক ১ লাখ করা, ভাতাদি বাড়ানো, যাতায়াতের জন্য এসি বাস এবং দূরের যাত্রায় বিমান ভাড়া রাখার দাবি, পরবর্তী বছর বিপিএলে পুনরায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা বহাল, ডিপিএলে প্লেয়ার্স ড্রাফট বাতিল, আরেকটি ওয়ানডে লীগ ও টি২০ লীগ, মানসম্পন্ন ক্রিকেট বল প্রদান, আম্পায়ার, ফিজিও, গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ মোট ১১ দফা দাবি দেয় ক্রিকেটাররা। এ সময় সাকিব বলেন, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য কোন ধরনের অনুশীলন বা ম্যাচ খেলবে না ক্রিকেটাররা।’
ক্রিকেটারদের হুট করে এমন ফুঁসে ওঠার বিপাকে পড়েছে বিসিবি। কারণ ইতোমধ্যেই ভারত সফরের জন্য টি২০ দল ঘোষণা হয়েছে, ৩ দিন পরই অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা। সেটিও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলমান এনসিএলের তৃতীয় রাউন্ড ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়ার কথা, তাও অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুতই ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি এসব বিষয়ে। ক্রিকেটাররা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিষয়গুলো জেনে বোর্ডের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। পরবর্তীতে এই বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়া তো থাকেই, আমাদের চেষ্টা থাকে সেটা ওদের দিয়ে দেয়া। আজকে বিষয়টি যেহেতু আমাদের নজরে এসেছে, আমরা এটা নিয়ে বোর্ডে আলোচনা করব। ক্রিকেটাররা বোর্ডেরই অংশ। যেকোন সমস্যা বা বিষয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। বিষয়টি যত দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সেটা আমরা দেখছি।’ তবে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই ক্রিকেটারদের এমন অবস্থান নেয়াতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিসিবির অন্যতম পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।