কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের ঘোষণা আসছে। নতুন গ্রেড অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের ১১তম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া নতুন করে ১২তম গ্রেডে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃজন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। দ্রুত এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন রবিবার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ ও সহকারীদের ১২তম গ্রেড দেয়ার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পর এ বিষয়ে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয় সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তার সঙ্গে বৈঠক করে প্রধান শিক্ষকদের ১১তম ও সহকারীদের ১৩তম গ্রেড দেয়ার সম্মতি পাওয়া গেছে। এর মাঝে ১২তম গ্রেডে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃজন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ১৩তম গ্রেড পান। প্রধান শিক্ষকরাও প্রশিক্ষণ ছাড়া ১২তম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড দেয়া হচ্ছে। তবে এটি পরিবর্তন করে যোগদানের পরই প্রধানরা ১১তম ও সহকারীরা ১৩তম গ্রেড পাবেন। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণ কাজ শুরু হয়েছে। নতুন গ্রেড বাস্তবায়ন হলে এ বৈষম্য অনেকটা দূর হয়ে যাবে।
এদিকে বেতন বাড়ানোর নামে কেউ আন্দোলনে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে, বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর (জাকির হোসেন) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এই ইস্যুতে যেই আন্দোলনে নামবে তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) বলা হয়েছে। শিক্ষকদের সতর্ক করতে ডিপিই থেকে সতর্ককবার্তা জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।
গ্রেড পরিবর্তন ও বেতনবৈষম্য দূরীকরণে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবিতে আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেখান থেকে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন ও লাগাতার কর্মবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন মিলে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’। এ পরিষদের মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ১৪ অক্টোবর সারাদেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন, পরদিন দুই ঘণ্টা ও ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।
পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ রবিবার বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম ও সহকারীদের ১১তম গ্রেড দেয়ার দাবি জানিয়েছি। এ দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এর বাইরে কোনো কিছুই মেনে নেয়া হবে না। গ্রেড পরিবর্তনের নতুনভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আমরা তা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, আমরা কয়েক দফায় আন্দোলনে নামলেও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এ কারণে আগামী ২৩ অক্টোবর ঢাকায় কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৩ অক্টোবর আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আসন্ন সমাপনী পরীক্ষা ও লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে।