চরম অস্বস্তিতে বিএনপির হাইকমান্ড

30

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহু চেষ্টার পরও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে বাগে আনতে পারছে না বিএনপি। বরং বিভিন্নভাবে বিএনপিকেই চাপের মধ্যে রাখছে ওই দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যেন কেউ নেই।
সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে জোটের শরিক দলগুলোকে অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন কারণে জোটে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে অবমূল্যায়ন করায় তারা বিএনপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে ওপরে ওপরে সম্পর্ক রেখে চললেও বাস্তবে আন্তরিকভাবে কোন ধরনের সহযোগিতাই করছে না।
জানা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী জোটগতভাবে পালন করতে গত ক’মাস ধরেই শরিক দলের সিনিয়র নেতাদের সহযোগিতা চাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু কোনভাবেই তারা সহযোগিতা করতে রাজি হচ্ছে না। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকা হলেও বেশ ক’টি শরিক দলের সিনিয়র নেতারা বৈঠকে অংশ নেননি। আর যারা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন তারাও বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বৈঠক উত্তপ্ত করেন। এ পরিস্থিতিতে একসঙ্গে আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন তারা। পরে বহু দেনদরবারের পর বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর একটি স্মরণসভা কর্মসূচী একসঙ্গে পালন করতে সক্ষম হয় বিএনপি জোট।
এদিকে ১৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মরণসভা কর্মসূচী পালন করতে গিয়েও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় লিপ্ত হন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের ক’জন নেতা। তাদের মঞ্চে বসার ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে বিএনপি জোটের শরিক দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, যেখানে মূল্যায়ন হয় না সেখানে একসঙ্গে কি করে কর্মসূচী পালন করা যায়? জোটের প্রধান দল বিএনপিকেই এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র জানায়, লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের জানান, কারাবন্দী দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। এ জন্য ২০ দলীয় জোটের প্রতিটি শরিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু শরিক দলের নেতারা আন্দোলনের বিষয়ে কোন সাড়া তো দেনই নি, বরং বিএনপি বিভিন্নভাবে তাদের অবমূল্যায়ন করছে বলে তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ করেন। তারা এও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে মতামত নিতেন। কিন্তু তিনি কারাগারে যাওয়ার পর সেই ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। এর জন্য বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দায়ী বলেও তারা তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে সবাইকে বুঝিয়ে তারেক রহমান একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তাব দিলে কোন শরিক দলের নেতাই সরাসরি তাতে সায় দেননি। এতে তারেক রহমান বিব্রত হন বলে জানা গেছে।
২০ দলীয় জোটের সহযোগিতা পেলে আসন্ন শীত মৌসুম থেকে রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রতিটি জোটসঙ্গী শরিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারাও। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দল সাড়া দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজপথের আন্দোলনে যেতে পারবে কি না সেটি অনিশ্চিত।
অবশ্য ১৫ অক্টোবর ২০ দলীয় জোটের স্মরণ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্যারোল নয়, রাজপথের আন্দোলনেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে যে, সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদেরও সহযোগিতা চান। তবে সভায় জোটের কোন শরিক দলের নেতাই বিএনপির সঙ্গে রাজপথে আন্দোলনের বিষয়ে কোন আশ্বাস দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, জোটের শরিক দলগুলো রাজি না হলেও বিএনপিকে আস্তে আস্তে রাজপথের আন্দোলনের দিকেই যেতে হবে। তাই আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এ জন্য জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রস্তুতি জোরদার করতে চান তারা। তিনি আরও জানান, সিনিয়র নেতাদের প্রতি তারেক রহমানের নির্দেশ ছিল আসন্ন শীত মৌসুমের শুরু থেকেই রাজপথের আন্দোলন চাঙ্গা করা। তারেক রহমানের নির্দেশ পেয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন তারা। কিন্তু কোন দলই এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া দেয়নি। তাই রাজপথের জোরালো আন্দোলন কবে থেকে শুরু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
খালেদা জিয়া বাইরে থাকতে বিএনপির যে কোন কর্মসূচীতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীরাও যোগ দিতেন। এ কারণে যে কোন কর্মসূচীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু তিনি কারাগারে যাওয়ার পর শরিক দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে না পারায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যেই ৬ বিভাগীয় সদরে যে জনসভা করেছে বিএনপি তাতেও তেমন সাড়া মেলেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনকালে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। মনোনয়ন বাণিজ্য করতে গিয়ে বিএনপি হাইকমান্ড জোটের বেশ ক’টি দলকে কোন আসনই দেয়নি। একমাত্র জামায়াতকে ২৫টি আসন ছাড়লেও অন্য কয়েকটি দলকে খুবই কম আসন দেয়া হয়েছে। আর জামায়াতসহ যেসব দলকে আসন ছেড়েছে সেখানেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যে কারণে নির্বাচনী প্রচারে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। বিএনপি জোটের এত কম আসনে বিজয়ী হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে জানা গেছে। আর নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপির সঙ্গে জোট সঙ্গীদের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে।