নির্মম এক শিশু হত্যা

27

ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটির নাম তুহিন মিয়া। বয়স মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। এ বছরই সে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। রাতে মা-বাবার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল। সকালে ঘুম ভাঙার পর তার স্কুলে যাওয়ার কথা। রাত পোহানোর আগেই খবর ছড়াল, শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে বাড়ির পাশেই কদমগাছের ডালে ঝুলতে দেখা যায় তার নিথর দেহ। শিশুটিকে মেরে ফেলা হয়েছে দ্রুত খবর রটে যায়। তার দুই কান কাটা। পেটে ঢোকানো বড় দুটি ছুরি। নির্মমতার এখানেই শেষ নয় তার যৌনাঙ্গটিও কেটে নেওয়া হয়েছে। নির্মম-নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে।
শিশুদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা দেশে এটিই প্রথম নয়। অনেক দিন ধরেই বড়দের পৈশাচিক নির্যাতন ও জিঘাংসার বলি হয়ে আসছে শিশুরা। পিটিয়ে হত্যা, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যাসহ নানাভাবে নির্দয় আচরণ শিশুদের ওপর চলে আসছে। কিন্তু শিশু তুহিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা লোমহর্ষক, অমানবিক এবং নজিরবিহীন। সন্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন নিষ্ঠুরতায় পাগলপ্রায় অবস্থা বাবা আবদুল বাছির ও মা মনিরা বেগমের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কচি শিশুটির বীভৎস ছবি ও আমাদের চোখ ছলছল করেছে, গা শিউরে উঠেছে এবং হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে। ঘটনাটি একই সঙ্গে আমাদের ভাষাহীন করে দিয়েছে। এভাবে মানুষ একটি নিরপরাধ শিশুকে মারতে পারে? কী নির্মম, কী অমানবিক এই হত্যাকাণ্ড!
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জমিজমা নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে শিশুটির পরিবারের। আবার এমন আভাসও পুলিশ দিয়েছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পরিবারের লোকজনই এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। শিশুর পেটে ঢুকিয়ে রাখা ছুরিতে অপরাধীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। কারা, কখন, কিভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা সব জানতে পেরেছে।
কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডই আমাদের কাম্য নয়। যারা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা উপরোক্ত নির্মম ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মানুষে-মানুষে বিরোধ-শত্রুতা থাকতে পারে; কিন্তু একটি নিষ্পাপ শিশুর কী অপরাধ? সে কেন বড়দের শত্রুতা-বিদ্বেষের বলি হবে? দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।