সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শিশু তুহিনকে হত্যার বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তুহিনের বাবা ও চাচা মিলেই খুন করেছেন তাকে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় তুহিনের বাবাসহ থানায় নিয়ে পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তুহিনকে খুন করা হয় বলে পুলিশকে জানান বাবা ও চাচা।
মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের কাছে শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন বাবা ও চাচা। হত্যার ঘটনায় সুনামগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তুহিনের চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। আদালতে হত্যার ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেন তারা।
রবিবার রাত আড়াইটার দিকে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির তুহিনকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান। পরে চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার তুহিনকে খুন করেন। পরে তুহিনের কান ও লিঙ্গ কেটে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এ ঘটনায় তুহিনের বাবাও জড়িত। তার সামনেই শিশু তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পাঁচ বছরের শিশু তুহিন কে হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে তার বাবা আবদুল বছিরসহ তিনজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বাকি দুজন হলেন তুহিনের চাচা আবদুল মছব্বির ও জমসেদ আলী।
পুলিশ তুহিনের মা মনিরা বেগমের দায়ের করা মামলায় এই তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে। তাদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। বিচারক শ্যাম কান্ত সিনহা প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, রোববার রাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শিশু তুহিনকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে ঘাতকরা। সোমবার ভোরে গাছের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে তুহিনের মামলার আসামীদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াবেন না দিরাইর কোন আইনজীবী। তারা তুহিনের পক্ষে বিনা খরচে আইনী সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জস্থ দরিাই কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে।
মঙ্গলবার দুপুর একটায় সুনামগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে দিরাই কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক এডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও এডভোকেট শহীদুল হাসতম খোকন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট দিলীপ কুমার দাস, অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, এডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহীন, সাংবাদিক শাহজাহান চৌধুরী, একে কুদরত পাশা এডভোকেট আজাদুল ইসলাম রতন, এডভোকেট আবুল কাশেম, এডভোকেট কামাল হোসেন, এডভোকেট আব্দুল আহাদ, এডেভোকেট সালেহ আহমদ, এডভোকেট ওবাদুর রশিদ চৌধুরী মিটু প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা দিরাই উপজেলার কেজাউড়া গ্রামের শিশু তুহিন ও বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন। দিরাই সমতির পক্ষ থেকে তুহিনের খুনিদের পক্ষে আদালতে কোন আইনজীবীকে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।