রাজনীতি সঠিক পথে চলুক

17

বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর অভিযোগের আঙুল উঠেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দিকে। এর আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পরও একই অভিযোগ ওঠে। শুধু ক্ষমতাসীন দল নয়, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে ধারায় চলছে তাতে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১১ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় আছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে দলের অনেক নেতাই নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন আদর্শের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই নানাভাবে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে নানা অপকর্মে যুক্ত হয়েছেন। শুধু চাঁদাবাজি কিংবা টেন্ডারবাজি নয়, আরো অনেক সামাজিক অপরাধের সঙ্গে এসব নেতাকর্মী জড়িত বলে অভিযোগ আছে। রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তাঁদের অপকর্মের নেটওয়ার্ক। এসব নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কাণ্ড তো সবার মুখে মুখে ফিরছে। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে তাঁদের পদ থেকে অপসারণের ঘটনা মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
আবার যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, তাঁদের গড়ে তোলা সাম্রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানও সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। কিন্তু তার পরও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা নেতাদের নাম আসছে গণমাধ্যমে। একই সঙ্গে এমন অনেকের সন্ধান মিলছে, যাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এমনকি ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও আজ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। রাজশাহীতে তাঁর রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ, রয়েছে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী। ঢাকার এক ওয়ার্ড কমিশনার ছয় বছর আগেও থাকতেন ছয় হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে। চলাফেরা করতেন মোটরসাইকেলে। এখন তিনি বসবাস করেন ছয় কোটি টাকা দামের ডুপ্লেক্স বাড়িতে। চড়েন কোটি টাকা দামের গাড়িতে। রাজনৈতিক দলে এসব দুর্বত্তের অনুপ্রবেশ জনমনে রাজনীতি সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিচ্ছে।
রাজনীতিকে সঠিক পথে আনতে হলে রাজনৈতিক দলে শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন নতুন নয়। কাজেই শুদ্ধি অভিযান শুধু ক্ষমতাসীন দলে নয়, সব রাজনৈতিক দলেই জরুরি। রাজনৈতিক দলে নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না হলে রাজনীতি বিশুদ্ধ হবে না। এ জন্য সব দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনগুলোতেও শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। রাজনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে এর কোনো বিকল্প নেই।