কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত বছরের তুলনায় এবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দূর্গাপূজার সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে মহাধুমধামে পূজার আয়োজন চলছে। যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬টিসহ ঢাকায় ৭ হাজার ২৭১টি মণ্ডপে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সনাতন সম্প্রদায়ের প্রধান শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘœ করতে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগামী চার অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের যাত্রা শুরু। মঙ্গলবার নগীরর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি মণ্ডপে পূজার জমজমাট আয়োজন দেখা গেছে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে দেবীর সাজসজ্জা আর শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ের কাজ। লাইটিং, প্যান্ডেলের কাজও শেষ পর্যায়ে। অপেক্ষা ঢাকে কাঠি পড়ার। বনানী ও ধানমণ্ডির কলাবাগান মাঠ, ঢাকেশ^রী মন্দিরের মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, বরদেশ^রী কালীমাতা মন্দির, জগন্নাথ হল, লক্ষীবাজার, তাঁতীবাজার এলাকাজুড়ে চলছে দুর্গোৎসবের আকর্ষণীয় আয়োজন। রাজধানীর দুর্গোৎসবে ভক্তদের সবচেয়ে বেশি ঢল নামে এসব এলাকার মন্ডপে মন্ডপে।
উৎসবকে কেন্দ্র করে চলছে এখন কেনাকাটার ধুম। রাজধানীর সব মার্কেট ও বিপণিবিতানে ভিড় যেন লেগেই আাছে। সবাই পছন্দের কাপড়, জুতো, পাঞ্জাবি কিনছেন। উৎসবকে আরও বর্ণিল করলে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের পক্ষ থেকে দেবী দুর্গার ছবি বা শরতের প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে টি-শার্ট, পাঞ্জাবির যেন বাড়তি কদর। তাঁতীবাজার, শাঁখারিবাজারসহ পুরনো ঢাকার অলিগলিতে এখন রাতদিনের মহাব্যস্ততা। চলছে শাখা, সিঁদুর, শঙ্খসহ পূজার বিভিন্ন উপকরণ কেনার ধুমধাম। সেই সঙ্গে স্বর্ণের দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই আছে।
তবে অসুরশক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গা শান্তির বার্তা নিয়ে আসবেন সবার মধ্যে এমন বিশ^াস থাকলেও এবারের আগমন ও বিদায় একেবাইরেই ভিন্ন। পন্ডিত অশিত চক্রবর্তী জানান, এবার দেবী দুর্গার ঘোটকে আগমন ও গমন। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগব্যাধি বাড়তে পারে। তিনি বলেন বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শস্য ভাল না হওয়ার পূর্বাভাস আছে। আগামী এক বছর পর্যন্ত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবে আনুষ্ঠানিকতা। ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় হবে দেবী দুর্গার বোধন। ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শুরু হবে। ৫ অক্টোবর সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হবে মহাসপ্তমী পূজা। ৬ অক্টোবর মহাঅষ্টমী পূজা, সেদিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হবে কুমারী পূজা। ৭ অক্টোবর সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী। ৮ অক্টোবর সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এজন্য সদরঘাটের ওয়াইজঘাটসহ আশপাশের এলাকায় নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি।
পূজা ম-পের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের নেয়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে তারা সারা দেশে রাত ১০টার মধ্যে সব প্রতিমা বিসর্জন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি ম-পে দুর্গা পূজা হবে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬টিসহ ঢাকায় ৭ হাজার ২৭১টি ম-পে এবার পূজা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৪৫৬টি, সিলেটে ২ হাজার ৫৪৫টি, খুলনায় ৪ হাজার ৯৩৬টি, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫১২টি, রংপুরে ৫ হাজার ৩০৫টি, বরিশালে ১ হাজার ৭৪১টি, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৬৩২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গতবছর সারা দেশে পূজাম-পের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৯১৫টি।