কমলগঞ্জে দু’বছর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী বেলাল শিকলবন্দি

12

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগ্রামের রেকাত মিয়ার একমাত্র ছেলে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত বেলাল আহমদকে শিকলে বেঁধে প্রায় দু’বছর ধরে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। ঘরের নোংরা পরিবেশে গরু থাকার ঘরেই দুই বছর ধরেই দিন কাটছে বেলালের। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে গৃহবন্দি শিকলে বাঁধা বেলালের জীবন ধারণের এই চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, গত পাঁচ বছর যাবত মানসিকভাবে অসুস্থ বেলাল। তার সংসার, স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে। প্রথমে কিছু চিকিৎসা করানো হলেও অভাবের সংসারে আর কোন চিকিৎসা না করার কারণে সম্পূর্ণরূপে অসুস্থ হয়ে উঠছে বেলাল আহমদ (৪৫)। ফলে তার আচার আচরন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। শিকলে বাঁধা ঘরে বন্দিদশায় তার শরীরে কঙ্কালসার ধারণ করেছে। শরীরে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বেলালের স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, বিয়ের সময়ে উনার কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। মনে হতো সহজ, সরল লোক। পরবর্তীতে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এভাবে পাঁচ বছর আগে থেকে তিনি রোগে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে শারীরিক সমস্যা বাড়তে থাকে। তাকে চিকিৎসা করাতে শ্বশুর সম্পদের বড় একটি অংশ বিক্রি করেছেন। অস্বাভাবিক আচরন আর মারধোর শুরু করলে তাকে আটকে রাখি। শরীরে কাপড় চোপড় পরিয়ে দিলে সব খোলে ফেলেন। বিছানাপত্র দেয়া হলে সেগুলো তছনছ করে খাট ভেঙ্গে ফেলেন। তবে বাধ্য হয়ে গত প্রায় দু’বছর ধরে এভাবে রাখতে হয়েছে। সংসারে আমাদের তিন সন্তান থাকলেও বড় ছেলেটিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার পর পাবনা মানসিক হাসপাতালে দেড় মাস থাকার পর আবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন লোকদের মারধোর করা ও নানাভাবে বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত রাখতে বাড়ির লোকজনের এমন সিদ্ধান্ত। দীর্ঘ বাড়িতে সামনের সাড়ির ঘরের গরু থাকার এক কক্ষে পায়ে শিকল বেঁধে রাখা বেলাল আহমদ। মাটিতে একটি চাটাইয়ে মধ্যে বেলালের বিছানা ও ঘুমানোর ব্যবস্থা। প্রায় দুই বছর যাবত ঘরের মধ্যে বাম পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা। শরীরে কাপড় পড়ালে সেটিও খুলে ফেলেন। উলঙ্গ ও নোংরা পরিবেশে তার বাসস্থান। ঘরের পাশেই প্রশ্রাব, পায়খানা করেন। তবে পুষ্টিকর খাবার আর চিকিৎসার অভাবে শরীর কঙ্কালসার হয়ে পড়ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, বেলালের বন্দিজীবন মর্মান্তিক। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আলাপকালে শমসেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য রুহেল আহমদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারিভাবে সহায়তা পেলে সুচিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সংবাদটি তাঁকে কেউ জানাননি। দ্রুত সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহজাহান কবীর চৌধুরী বলেন, চিকিৎসা না করিয়ে কাউকে শিকলবন্দি রাখা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, গুরুতর অপরাধও বটে। বেলাল আহমদকে উচ্চতর চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিলেন তিনি।