কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষককে জাতীয়করণ করেছে সরকার। তাদের মধ্যে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক এখনো অ্যাকাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণমূলক কাম্য যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হননি। শিক্ষকদের জাতীয়করণ করার পর তিন বছর সময় দেয়া হলেও অনেকে যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই সেই অযোগ্য ও ভুয়া সনদধারীদের তালিকা তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। এ তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি তিন ধাপে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯২১, দ্বিতীয় ধাপে ১৭১৯টি এবং তৃতীয় ধাপে বেশ কয়েকটি এনজিও দ্বারা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ২ হাজার বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দেখা গেছে, নতুন করে সরকারি হওয়া বিদ্যালয়গুলো মূলত রেজিস্টার্ড, নন-রেজিস্টার্ড কমিউনিটি স্কুল, এনজিও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের অধীনে পরিচালিত হয়েছে। শিক্ষকরা নামমাত্র মাসিক বেতন পেতেন। এনজিও পরিচালিত ও কমিউনিটি স্কুলগুলোর বেতন-ভাতা ছিল নিয়মিত। জাতীয়করণের ঘোষণার পর স্কুলগুলো সরকারের অধীনে চলে আসে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আগের বিধিমালা অনুযায়ী জাতীয়করণ হওয়া নারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এইচএসসি পাস ও সিইনএড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) কোর্স এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ডিগ্রি বা সমমান পাস ও সিইনএড কোর্স করতে বলা হয়। যোগ্যতা অর্জনে তাদের জাতীয়করণের পর সময় বেঁধে দেয়া হয় তিন বছর। এ সময় পেরিয়ে আরও এক বছর পার হয়ে গেলেও জাতীয়করণ হওয়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষক নিজেদের যোগ্যতা সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ শিক্ষকদের অধিকাংশরাই সরকারি চাকরির শেষ সময়ে চলে এসেছেন। তাদের অনেকের ৫০ থেকে ৫৫ বছর বয়স হয়ে গেছে। বর্তমানে অবসরে যাওয়ার অপেক্ষায় তারা। এর বাইরে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের বেশকিছু নারী-পুরুষ শিক্ষক রয়েছেন, যারা এসএসসি বা এইচএসসি পাস করে বেসরকারি স্কুলে চাকরি শুরু করেন। পরে জাতীয়করণ হলেও তারা আর সে পদের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামসুদ্দীন মাসুদ বলেন, অস্থায়ী বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হওয়ায় অনেক শিক্ষকের সে পদের জন্য যোগ্যতা না থাকলেও জাতীয়করণ করা হয়েছে। যেহেতু তারা দীর্ঘদিন সেখানে চাকরি করছেন, তাই যোগ্যতা অর্জনে তাদের নতুন করে সময় বাড়ানো উচিত। আর ৫০ থেকে তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে বিধি কিছুটা শিথিল করে অবসর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, যোগ্যতা অর্জনে শিক্ষকদের দেয়া নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। পিছিয়ে পড়াদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা অবসরে যাওয়ার পথে, তাদেরকে অবসরে পাঠানো হতে পারে। অন্যদের নতুন করে আরও সময় বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে। সে সময়ের পরও যদি ব্যর্থ হন, তবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হতে পারে।
তারা আরও জানান, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এসব বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে, তাই এটি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক এ এম মনসুর আলম ছবলেন, জাতীয়করণ হওয়া যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অ্যাকাডেমিক ও প্রশিক্ষণের সনদ নেই, তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। কেউ ভুয়া সনদে চাকরি করছেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, কাম্য যোগ্যতা অর্জনে নির্ধারিত সময় পার হলে গেলেও, কেউ কেউ তা থেকে এখনো পিছিয়ে রয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সময় বৃদ্ধি বা চাকরিচ্যুত করার যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।