১০ বছর ধরেই অস্থিতিশীল দেশের পুঁজিবাজার। দুই কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় শেয়ারবাজারেই বড় দরপতন হয়েছে। জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বাজারে টানা দরপতন। ডিএসইর তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৩ জুন বাজেট ঘোষণার দিন থেকে গত বুধবার পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা। আর ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র সাত কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হয়েছে মূলত বিভিন্ন কম্পানির স্পন্সর বা উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রির কারণে। উদ্যোক্তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় বাজারে শেয়ারের জোগান বেড়ে গেছে। সে হারে অর্থের জোগান না থাকায় দর কমছে। তা ছাড়া এবারের বাজেটেও সাপোর্ট বলতে তেমন কিছু নেই। বাজারে ভালো শেয়ারের অনুপস্থিতি ও বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে যাওয়াও দরপতনের বড় কারণ। গত ১০ বছরে কোনো ভালো শেয়ার বাজারে আসেনি। বর্তমান বাজারে বড় ধরনের দরপতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, কারসাজি, মানহীন কম্পানির আইপিও, সুশাসনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টদের দ্বন্দ্বকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। টানা পতনে বাজারে যখন লেনদেনের খরা চলছে তখন মানহীন কম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দিয়ে চলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে সেকেন্ডারি বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার দরপতনের বাজারেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে নিম্নমানের স্বল্প মূলধনী কিছু কম্পানির শেয়ারের দাম। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারসাজি ছাড়া এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কারসাজির পাশাপাশি বাজারে সুশাসনের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। আবার একের পর এক মানহীন কম্পানি বাজারে আসছে। বছরের পর বছর এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করায় ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরেছে।
দেশের টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধির স্বার্থে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতায় বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। পুঁজিবাজারে ভালো কম্পানির সংখ্যা এখন হাতে গোনা। বহুজাতিক কম্পানিগুলোকে বাজারে আনার কোনো উদ্যোগ নেই। বাজারে ভালো শেয়ারের জোগান দিয়ে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা নিশ্চিত করতে পারলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা মনে করি।