কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুই গ্রুপে ভাগ হওয়ার পর এবার জাতীয় পার্টি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে আজ রবিবার সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন রওশন এরশাদ। শনিবার এক নোটিসে এই সভা আহ্বান করেন রওশন এরশাদ। সেখানে অপর অংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টির অপর অংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদের জাতীয় পার্টির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। আগামী ৩০ নভেম্বর এই সম্মেলন ডাকা হয়েছে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির একাংশ রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণার পর মূলত সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা এই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকতেই জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। ফলে জাতীয় পার্টি এখন মূলত রওশন পন্থী এবং জিএম কাদের পন্থী এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রওশন এরশাদকে দলের একাংশের চেয়ারম্যান ঘোষণা দেয়ার পর অপর অংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে রওশনের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী গত শুক্রবার বিকেলে জিএম কাদের পন্থীদের নিয়ে বনানীতে দলের কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। যৌথসভায় এই অংশের সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য ফিরোজ রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, যারা রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তারা গঠনতন্ত্র বিরোধী অপরাধ করেছেন। তারাই সাধারণ জনগণ এবং জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টির মাঝে বিভ্রান্তি যারা ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে আজ রবিবার থেকে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পর এই প্রথম জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি দুইভাগে ভাগ হয়েছে। রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদের উভয়ই এখন দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত। এই অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংসদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে। যদিও এর আগেই জিএম কাদের বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাকে বিরোধী দলের নেতা না বানাতে পাল্টা চিঠিও দিয়েছেন রওশন এরশাদ।
এই অবস্থায় দলের একাংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করতে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার কক্ষে দলটির সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন। বিরোধী দলের উপনেতার প্যাডে লেখা নোটিসে তিনি উল্লেখ করেন Ñজাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদীয় দলের সভা রবিবার দুপুর ১টায় সংসদ ভবনের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। শনিবার রওশন এরশাদ এক নোটিসের মাধ্যমে এই সভা ডেকেছেন। নোটিশে রওশন এরশাদকে জাপার চেয়ারম্যান উল্লেখ করা হয়েছে। রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত এ নোটিশে দলের সব সংসদ সদস্যকে সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যসব সদস্যের মতো জাতীয় পার্টির ‘চেয়ারম্যান’ গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। চিঠিতে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে অপর অংশের চেয়ারম্যান জিএম কাদের আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য এয়ার আহমদ সেলিম জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। সেলিমের এই যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত সভায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জিএম কাদের বলেন, সম্মেলনে দলের নেতা-কর্মীরাই জাতীয় পার্টির আগামীদিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। নেতা-কর্মীদের সিদ্ধান্তই আমি মেনে নেব। পদ-পদবি বা ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের জন্য আমি রাজনীতি করি না; দেশ, দেশের মানুষ ও জাতীয় পার্টির জন্য রাজনীতি। কোন লোভ-লালসার জন্য রাজনীতি নয়। জাতীয় পার্টি দেশের বড় তিনটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম। দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য রয়েছে এই দলের। রাজনৈতিক শূন্যতায় দেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। নতুন প্রজন্মের সামনে রাজনীতি করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম এই দল। এখনই দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারলে আগামীদিনের রাজনীতিতে এবং দেশ পরিচালনার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পার্টি আরও এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, দল গঠনতন্ত্র এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশনায় চলছে। জাতীয় পার্টিতে বিভেদের অবকাশ নেই। বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। বিশৃঙ্খলার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে থাকবে না। সঠিক পথে ও সুশৃঙ্খলভাবে জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে এগিয়ে যাবে।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতীয় পার্টির ওপর বার বার আঘাত এসেছে। নানা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুবার পাঁচটি করে আসনে জয়ী হয়েছেন, এটা ইতিহাস। গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা মোতাবেক এরশাদ তার অবর্তমানে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন। এটা গঠনতন্ত্র মোতাবেকই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান এইচএনএম শফিকুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ। দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদের উপস্থাপনায় যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আলমগীর সিকদার লোটন ও নাজমা আখতার।