বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টা

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অক্টোবর থেকে রাজপথের আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালীকে কেন্দ্র করে শোডাউন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া আন্দোলন শুরুর আগে সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফর করবেন।
সূত্র মতে, গতবছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের সিনিয়র নেতারা রাজপথের আন্দোলনের কথা বলে আসছেন। কিন্তু আজ না কাল, কাল না পরশু এমন করতে করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় পার করে ফেলেছে বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা জামিন কিছুই না হওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে আর সময় নষ্ট না করে রাজপথের আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে স্কাইপি বৈঠকে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অক্টোবরের মধ্যে রাজপথের আন্দোলন শুরু করার তাগিদ দেন। এর পর দলের সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আরও ক’টি বৈঠক করে আন্দোলন শুরুর কৌশল নির্ধারণ করেন। আন্দোলন শুরুর আগে টেস্ট কেস হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র‌্যালিতে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো করে শোডাউন করা হয়। রাজপথের আন্দোলন শুরু হলে যেন দলের আরও বেশি নেতাকর্মীতে সক্রিয় করা যায় সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এখনও কিছু করতে পারিনি। শীঘ্রই দলকে সুসংগঠিত করে আমরা রাজপথের আন্দোলন বেগবান করব। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করা। এ আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনতাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে এতদিন রাজপথের আন্দোলন শুরু করা যায়নি। তবে শীঘ্রই আন্দোলন শুরুর জন্য প্রস্তুতি চলছে। রাজপথে আন্দোলন করেই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি আদায় করা হবে। এখন দলকে সংগঠিত করার কাজ চলছে। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেই রাজপথের আন্দোলন শুরু করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, পুরো সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি চলবে। আর অক্টোবর থেকে রাজপথের আন্দোলন শুরু হবে। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর চেষ্টার পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতাও নেয়া হবে। এ জন্য শীঘ্রই বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলা হবে। এ ছাড়া বিএনপিকে পছন্দ করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার এমন লোকদের সঙ্গেও আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতবিনিময় করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আরও আগেই রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালন শুরু করতে চেয়েছিল বিএনপি হাইকমান্ড। কিন্তু দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালনে সায় না দেয়ায়, বিশেষ করে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে আগ্রহ না দেখানোর কারণে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হয়। কিন্তু এবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী সফল হওয়ার পর থেকে অনেক নেতাকর্মীই রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী পালনের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। তাই বিএনপি হাইকমান্ড অক্টোবর থেকেই আন্দোলন শুরু করতে চাচ্ছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ইতোমধ্যেই বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগীয় সদরে ৩টি সমাবেশ করেছে বিএনপি। তবে সমাবেশগুলোতে নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি না দেখে হতাশ হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। কিন্তু দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় শোডাউন করতে পারায় খুশি হয়েছে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তাই এখন আন্দোলন কর্মসূচী শুরু হলে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছে কেন্দ্রের ভুলের কারণে বার বার দলকে মাসুল দিতে হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে কেন্দ্র থেকে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করে সিনিয়র নেতারা ঢাকায় বাসায় অবস্থান করেন। আর তৃণমূল নেতাকর্মীরা রাজপথে কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হন। এ ছাড়া এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কেন্দ্র থেকে বাস্তবসম্মত কৌশল গ্রহণ করা হয়নি। তাই আওয়ামী লীগের বাস্তবসম্মত বিভিন্ন কৌশলের কাছে বিএনপি মার খেয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নাখোশ। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলন কর্মসূচী শুরুর আগে রাজপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চয়তা চায় তারা। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের আন্দোলন কর্মসূচীতে মাঠে সক্রিয় থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানতে চান কেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথের আন্দোলন শুরু করা যাচ্ছে না। তখন তারা তারেক রহমানকে জানান, দলের বিশাল নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই এতদিন রাজপথের আন্দোলনের বিষয়ে সায় না দেয়ায় আন্দোলন শুরু করা যায়নি। তবে এখন সবাই আন্দোলনের বিষয়টি উপলব্ধি করছে তাই শীঘ্রই আমরা নতুন উদ্যমে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করতে পারব। এমন আশ্বাস পাওয়ার পর তারেক রহমান তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে আন্দোলনের বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
এতদিন বিএনপি রাজপথের আন্দোলন শুরু করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে- ২০১৫ সালে টানা ৯২ দিনের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া। দেশ-বিদেশে বিএনপির এ আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিশেষ করে বিদেশে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়।