রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা

27

ডেঙ্গু আতঙ্কে দেশ যখন কাঁপছে, তখন দেশব্যাপী দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের বিস্তার। তিন পার্বত্য জেলাসহ ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায়ই প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আর টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ দেশের ২৬টি জেলায় কালাজ্বর দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজারের মতো মানুষ। তাই এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কোনো কোনো অঞ্চলে মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গুর আগে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপে দেখা দিয়েছিল। দুটি রোগেরই ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশা। ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশা। কালাজ্বরের বাহক স্যান্ড ফ্লাই বা বেলেমাছি। পানিবাহিত রোগের মধ্যে টাইফয়েড ও ডায়রিয়া ব্যাপক রূপে দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, কলেরাও আবার ভয়ংকর রূপে ফিরে আসতে পারে। এসব রোগ, রোগের জীবাণু ও বাহক আমাদের দেশে আগেও ছিল। প্রকোপও কমবেশি প্রতিবছরই দেখা যায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রোগ ছড়ানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ ক্রমেই বাড়ছে। সে কারণে রোগগুলো কখনো কখনো কোনো কোনো অঞ্চলে প্রায় মহামারি আকারে ফিরে আসছে।
জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করাই হচ্ছে একমাত্র পথ। সচেতনতা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিভাবে এসব রোগ থেকে বাঁচা যায়, সে সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি নিতে হবে। মশা-মাছি নিধনে সারা বছরই কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। জনগণকে এসব কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেখা গেছে, রাজধানীতে মশক নিধন অভিযান পরিচালনার সময় অনেকেই অসহযোগিতা করছেন। অভিযানকারীদের বাড়িতে ঢুকতে দেন না। নিজেরাও মশক নিধনে ব্যবস্থা নেন না। এমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রয়োজনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কোনো বাড়িতে মশার বংশবিস্তার হলে তা শুধু ওই বাড়ির লোকজনের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, আশপাশের বহু মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণে আগে নিয়মিত কর্মসূচি থাকলেও তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে জানা যায়। বরং এখন এসব কর্মসূচি আরো জোরদার করতে হবে।
দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে। সেই কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে সিটি করপোরেশন, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মতো অন্য উদ্যোগগুলো এক ছাতার আওতায় সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা যায় কি না তা-ও ভেবে দেখতে হবে। আমরা চাই, দ্রুত এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।