কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলনে নামতে সায় নেই দলের অধিকাংশ নেতার। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সিনিয়র নেতাদের ওপর চটেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের পক্ষের সিনিয়র নেতারা আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার কৌশল নিয়েছেন।
সূত্র মতে, সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের মহাসচিবসহ কয়েক সিনিয়র নেতার কাছে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানতে চান- কেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথের আন্দোলন শুরু করা যাচ্ছে না? তখন তারা তারেক রহমানকে জানান, দলের বিশাল নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাই রাজপথের আন্দোলনে সায় দিচ্ছে না। এমনকি দলের স্বাভাবিক কর্মসূচীতেও তারা আসতে চায় না। আর নেতারা যদি আন্দোলনে সায় না দেয় তাহলে কর্মীদের কিভাবে মাঠে নামানো যাবে। তারপরও তারেক রহমান যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন শুরু করার তাগিদ দেন।
আন্দোলনের বিষয়ে তারেক রহমানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পরও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচী শুরুর বিষয়ে যখন আশানুরূপ সাড়া পাওয়া গেল না তখন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কোন কোন নেতা কৌশলে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন।
১৬ আগষ্ট বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আক্ষেপ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে না পারা আমাদের দুর্ভাগ্য। কারণ, আমরা তার মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি। এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছেন, দলের নেতারা আন্দোলনে সায় দিচ্ছে না বলেই রাজপথে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করতে পারছে না বিএনপি। আর রাজপথে আন্দোলন না থাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তিও হচ্ছে না। ওই অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল দলের সাধারণ নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। তাই আমাদের সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে দলের সবাইকে রাজপথে আন্দোলনে নামার শপথ নিতে হবে।
এর আগে ৯ আগষ্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থ। তার মুক্তির জন্য মানববন্ধনসহ বিএনপি যেসব কর্মসূচী পালন করেছে তা সামাজিক কর্মসূচী। এমন কর্মসূচী দিয়ে তাকে মুক্ত করা যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী কিন্তু আমরা নির্বাক তাকিয়ে আছি। তিনি জেলে যাওয়ার পর আমরা তাঁর মুক্তির জন্য কার্যকর আন্দোলন করতে পারিনি। তাই তাকে আমরা মুক্ত করতে পারিনি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে কাজ হবে না। রাজপথের জোরালো আন্দোলন ছাড়া তাকে মুক্ত করা যাবে না। তবে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই কিনা সে সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। দল থেকে আন্দোলনের ডাক না দিলেও নিজেদের অবস্থান থেকেই আন্দোলন শুরু করে দিতে হবে।
মির্জা ফখরুলের মতো গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যেও দলের নেতাদের যে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথের আন্দোলনে অংশ নেয়ার আগ্রহ নেই তা প্রকাশ পেয়েছে। দলের নেতাদের মধ্যে অনেকেরই আন্দোলনে সায় না থাকায় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দল থেকে আন্দোলন কর্মসূচী নাও হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই গয়েশ্বর রায় সাধারণ নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেছেন, নিজেদের অবস্থান থেকেই আন্দোলন শুরু করতে হবে।