এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। তবে দুঃখজনক হলো এ বিষয়ে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই। উপাচার্যরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। সেগুলোকে সমন্বয় করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জটিলতা ও গোপনীয়তা রক্ষা, মাইগ্রেশন পদ্ধতি কিভাবে থাকবে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার জন্য প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ ভর্তি নীতিমালা। সেটি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি বিধায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না উচ্চশিক্ষা প্রার্থী শিক্ষার্থীদের। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তিতে একমত হলেও অন্তত একটি বেঁকে বসেছে শেষ মুহূর্তে। অথচ এই উদ্যোগ চলছে ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও এ নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে ঢাবি, বুয়েটসহ কয়েকটি নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এর বিরোধিতা করেন। ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উপাচার্যদের সভায় অধিকাংশ ভিসি সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হলেও সংশ্লিষ্ট একটি মহলের টালবাহানায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উলেখ্য, শাহজালাল এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় অভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিলেও স্বার্থান্বেষীদের আন্দোলনের কারণে তা ভন্ডুল হয়ে যায়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কতিপয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লেখালেখি করলেও অজ্ঞাত কারণে তা ঝুলে আছে। এমনকি গত বছরের শুরুতে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে আহŸায়ক করে ৭ সদস্যের একটা কমিটি গঠন এবং কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এ বিষয়ে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। অভিযোগ রয়েছে ফরম বিক্রি ও খাতা মূল্যায়ন বাবদ আয়কৃত কোটি কোটি টাকাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির অন্তরায়।
সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলো- একই পদ্ধতির পরীক্ষায় মূলত একই প্রশ্নপত্রে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ। এতে স্বভাবতই অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের তুলনামূলকভাবে হয়রানি ও খরচ অনেক কম হয়। ভর্তির চাপ ও বিড়ম্বনাও কমে অনেককাংশ। তদুপরি অনিয়ম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির আশঙ্কা থাকে কম। বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজসমূহ বাদে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং বুয়েট, চুয়েটসহ বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের সারাদেশে ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি সম্মুখীন হতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের। এ বিষয়ে আর্থিক লেনদেনসহ স্বজনপ্রীতি, প্রশ্ন ফাঁস ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। একাধিক ভুয়া ভর্তিসহ এমনকি পরীক্ষায় আদৌ অংশ না নিয়েও ভর্তির অভিযোগ পর্যন্ত আছে। প্রতিবছর উত্থাপিত এত সব অনিয়ম-অব্যবস্থার অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই।