আজ একটি ঐতিহাসিক অভূতপূর্ব দিন। উদ্বোধন হচ্ছে দেশবাসীর স্বপ্নের পারাপার স্বপ্নসেতু। এটি শুধু সেতুই নয়, এটি দেশপ্রেম, দেশের মর্যাদা বিশ্বে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার এক অনন্য প্রতীক। এ সেতু প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছুর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। তারই অসম সাহসিকতা, অকুণ্ঠ নিষ্ঠা ও অপ্রতিরোধ্য অপরাজেয় উন্নয়ন মানসিকতার ফলস্বরূপ জাতি পেল বিশ্বের বিস্ময় এক সুদৃঢ়, নান্দনিক, বিশাল সম্ভাবনার সেতু। এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই যে, পদ্মা সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মাণ করে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দিয়ে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। তাই পদ্মা সেতু সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান নদীর ওপরে নির্মিত হলো দেশের দীর্ঘতম সেতু। শুধু দেশপ্রেম থাকলেই কি এমন ব্যয়বহুল অমিত সম্ভাবনার সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব? দেশপ্রেম প্রাথমিক শর্ত অবশ্যই। আমরা বলব এ সেতু একটি সরকারের সুশাসনেরও সুফল। মানবপ্রেমী জনকল্যাণমুখী সুশাসক না হলে সুশাসন আশা করা বাতুলতা। সর্বোপরি এই সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন জাতির পিতার কন্যা। এই সেতুর উদ্বোধন তাই এক আবেগমথিত আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। পুরো জাতিরই উৎফুল্ল-উল্লাসে মেতে ওঠার দিন।
পদ্মা সেতু নানা কারণেই বিশ্বের বিস্ময় হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গেছে। এক সেতুতেই বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে ভাবমূর্তির সমুজ্জ্বল শিখরে। এই সেতু আশ্চর্য গৌরব নানা কারণেই। প্রথমত, সব দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র নসাৎ করে সম্পূর্ণ দেশের অর্থায়নে এই সেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সারা বিশ্বের মান বিচারেই এটি দারুণ এক বিস্ময়। তৃতীয়ত, এটি উৎকর্ষের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সদাসচেষ্ট একটি দেশের, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির, অর্থনৈতিক চালচিত্র আমূল বদলে দেবে।
দুদিন আগে পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে ওঠার সুসংবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলাবাহুল্য, সেতু উদ্বোধনের পর ওই অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মার দুই পাড়ে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।
পদ্মা সেতুকে দেশের অহঙ্কার ও গর্ব বলে অভিহিত করে সরকার প্রধানের বক্তব্য- ‘নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের শক্তিমত্তা নতুনভাবে চেনাতে পেরেছে। দেশবাসীর সাহসেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’ এই সেতু চালু হওয়ার পর জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে বলে আমরা আশা করতেই পারি।
পদ্মা সেতু অনন্যসাধারণ এক সেতু। সেতুটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সেতু যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং অন্য অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। বিশেষত এটি ভুটান, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য আরও দ্রত সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে। সব মিলিয়ে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পদ্মা সেতু হলো সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সম্ভাবনার অমিত প্রতীক। শাবাশ বাংলাদেশ।