মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে কৃষকদের কাছে ধান ও ব্যবসায়ীদের কাছে চাল থাকলেও সরকারের কাছে রাখার জায়গা নেই। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে ধান ও মিল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল কিনতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিলেও গুদাম এবং গোদামে জায়গা সংটকের কারণে বিক্রি করতে পারছেন না। জায়গা সংকটের কারণে উপজেলা খাদ্য গুদামে ধান-চাল ক্রয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে কমপক্ষে আরেকটি খাদ্য গুদাম নির্মাণের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, জগন্নাথপুরে ৫০০ মেট্রিকটন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মোট ৩টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে ১টি গুদাম উপজেলা সদরে ও ২টি গুদাম রাণীগঞ্জ বাজারে। যেখানে কমপক্ষে ২টি গুদাম উপজেলা সদরে থাকা প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে প্রবীণ মুরব্বীরা জানান, এক সময় জগন্নাথপুরে গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। নৌপথে যোগাযোগ ছিল। কুশিয়ারা নদী পাড়ে রাণীগঞ্জ বাজার অবস্থিত। হয়তো নৌপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সে সময়ে রাণীগঞ্জে ২টি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে উপজেলা সদর। যেখানে গাড়ি ও নৌপথ দুটোই রয়েছে। সহজ যোগাযোগ সুবিধার জন্য মানুষ উপজেলা সদর খাদ্য গুদামে গিয়ে ভীড় জমান।
জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্য গুদাম অফিস সূত্র জানায়, গত মে মাস থেকে জগন্নাথপুরে সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল কেনা শুরু হয়। চলবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। এবার প্রথমে কৃষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ মণ ধান কেনা হলেও বর্তমানে ৭৫ মণ করে কেনা হচ্ছে। বন্যার কারণে কৃষকদের বাঁচাতে সরকার বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে সরকারের দেয়া সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। শুধু জায়গা সংকটের কারণে সরকারের মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। ২১ জুলাই রবিবার সরজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য গোদামে ধান বিক্রির জন্য কৃষকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। তাদেরকে সামলাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে যান। তবে জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য গোদামে আর জায়গা না থাকায় রাণীগঞ্জ গুদামে বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে বিদায় করে দেয়া হচ্ছে। এ সময় ভুক্তভোগী কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমে তালিকায় নাম লেখাতে কৃষি অফিসে লাইন দিলাম। পরে খাদ্য গুদামে ধানের সিম্পুল নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ তা মেশিন দিয়ে টেস্ট করে বলেন আরো শুকিয়ে আনতে। এবার শুকিয়ে আনার পর বলেন গুদামে জায়গা নেই। যেতে হবে রাণীগঞ্জ গুদামে। সেখানে গেলে তারা কি বলবেন বুঝতে পারছি না। সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে এতো ভোগান্তি জানলে ধান বিক্রি করতে আসতাম না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোলা বাজারে প্রতি কেজি চাল ২০ থেকে ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সরকার মিল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে কিনছে। এছাড়া প্রতি মণ ধান ৫ থেকে ৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সরকার ১০৪০ টাকা দরে কিনছে। বর্তমানে জগন্নাথপুরে ধান-চালের বাজার মন্দা হওয়ায় সরকারের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী রহিম আলী বলেন, আমি নিজে ভাল মানের চিকন চাল ৫০ কেজি বস্তা ১১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ধীরাজ নন্দী চৌধুরী ও উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আবদুল হান্নান কামাল বলেন, জগন্নাথপুর থেকে এবার সরকার ১৬০৩ মেট্রিকটন ধান ও ১৫৫৯ মেট্রিকটন চাল ক্রয় করার বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ টন ধান ও ৩৭৯ টন চাল কেনা হয়েছে। ধান-চাল মিলিয়ে প্রায় ৩২০০শ মেট্রিকটন চাহিদা থাকলেও ৩টি গুদামে মাত্র ১৫০০ টন সংরক্ষণ করা যাবে। এর মধ্যে উপজেলা সদর গোদামে আর জায়গা না থাকায় ধান-চাল ক্রয় বন্ধ রয়েছে। তবে রাণীগঞ্জ গুদামে বিক্রি করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তারা বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে কমপক্ষে আরেকটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। গোদাম নির্মাণের জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সদরে আরেকটি গুদাম হলে কৃষকদের আর এতো কষ্ট পেতে হবে না।