স্পোর্টস ডেস্ক :
লর্ডসে উত্তেজনাকর ফাইনালে রবিবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। অবশ্য ঠিক সুপার ওভারেও নয়। সুপার ওভারেও ম্যাচটি টাই হওয়ায় বাউন্ডারি বিবেচনায় ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
পুরো টুর্ণামেন্টে বেশ কিছু খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত সাফল্যে তাদের নিজ নিজ দল দারুণভাবে উপকৃত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র বিবেচনায় এবারের আসরের সেরা একাদশ তুলে ধরা হলো :
রোহিত শর্মা (ভারত) : ৩২ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এই ওপেনারের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ভারত নিজেদের সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে। একটি বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করার বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রোহিত। এর মধ্যে ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার বিপক্ষে টানা তিনটি ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৬৪৮ রান নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। ২০০৩ সালে ভারতের মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকার ৬৭৩ রান নিয়ে এখনো বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছেন।
জেসন রয় (ইংল্যান্ড) : হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারনে তিনটি ম্যাচে খেলতে পারেননি ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়। কিন্তু তিনি ফিরে আসার পর থেকেই ইংল্যান্ডের চেহারা পুরো পাল্টে যায়। ৬৩.২৮ গড়ে ৪৪৩ রান করা রয় ইংলিশ লাইন-আপে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছিলেন। আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে তিনি গত চার বছর যাবত ইংল্যান্ডকে বেশ কিছু সাফল্য এনে দিয়েছেন।
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া) : চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৫০০ রানের মাইলফলক ছাড়িয়ে যাবার রেকর্ড গড়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। এর আগে ২০০৭ সালে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ম্যাথু হেইডেন ও রিকি পন্টিং। আর এবার অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চের সাথে এই তালিকায় যোগ হয়েছেন ওয়ার্নার। রোহিত শর্মার থেকে এক রান কম নিয়ে ৬৪৭ রানসহ তিনি সর্বোচ্চ রানের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার করা ১৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। বল টেম্পারিং ঘটনায় নিষিদ্ধ থাকার পর জাতীয় দলে ফিরে এসে তার এই ফর্ম অন্তত এটাই প্রমান করে এখনো দলে তার প্রয়োজন আছে।
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) : বাংলাদেশের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দুটি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৮ ইনিংসে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে এসেছে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬০৬ রান। এছাড়াও বল হাতে ১১ উইকেট নিয়ে তিনি প্রমান করেছেন বিশ্বের শীর্ষ ওয়ানডে অল-রাউন্ডার হিসেবে এখনো তিনি অপ্রতিরোধ্য।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড) : নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ব্যাট হাতে সংগ্রহ করেছেন ৫৭৮ রান। বিশ্বকাপে এক আসরে একজন অধিনায়কের এ পর্যন্ত সংগৃহীত সর্বোচ্চ রান। ২০০৭ সালে শ্রীলংকার অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনে ৫৪৮ রান সংগ্রহ করে এতদিন পর্যন্ত এই তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। ফাইনালে পরাজিত হলেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দখল করে নিয়েছেন উইলিয়ামসন।
বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড) : অপরাজিত ৮৪ রানে ঝকঝকে ইনিংস দিয়ে ফাইনালের ম্যাচ সেরা বেন স্টোকস ৪৫৬ রান নিয়ে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ স্কোরের তালিকায় নবম স্থান দখল করেছেন। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেও ইংলিশ ব্যাটিং লাইন-আপে আস্থার নাম ছিল স্টোকস। বল হাতেও নিয়েছেন ৭ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আন্দিলে ফেলুকুয়ায়োর অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরেছিলেন। নি:সন্দেহে ক্যাচটি টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচের তকমা পেয়েছে।
এ্যালেক্স ক্যারি (অস্ট্রেলিয়া) : গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে আত্মবিশ্বাসী ও ব্যাট হাতে বেশ কিছু অসাধারন ইনিংস উপহার দেয়ায় ২৭ বছর বয়সী ক্যারিকেই এবারের টুর্নামেন্টের অন্যতম সফল উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ব্যাটিংয়ে আলাদা একটি ধারা বজায় রাখার জন্য সেমিফাইনালে তাকে পাঁচ নম্বরে উঠিয়ে আনা হয়েছিল।
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) : ২৭ উইকেট নিয়ে টুর্ণামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বকাপের এক আসরে উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এর আগে ২৬ উইকেট নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে ছিলেন অবসরে যাওয়া আরেক অস্ট্রেলিয়ান পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা।
জোফরা আর্চার (ইংল্যান্ড) : বার্বাডোজে জন্মগ্রহণকারী পেসার আর্চার প্রথমবার বিশ্বকাপের আসরে খেলতে নেমেই নিয়েছেন ২০ উইকেট। একইসাথে তিনি প্রমান করেছেন ইংল্যান্ড কেন তাড়াহুড়া করে তাকে বিশ্বকাপের দলে নেবার জন্য এতটা উদগ্রীব ছিল। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ে তার কিছু অনবদ্য স্পেল দারুন কাজে দিয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোন চ্যাম্পিয়ন দলের হয়ে এত উইকেট এর আগে কোন বোলারই নিতে পারেনি। ফাইনালে সুপার ওভারে তার হাতে বল তুলে নিয়ে ইংল্যান্ড তার প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে তার শতভাগ প্রতিদান আর্চার দিয়েছেন।
লোকি ফার্গুসন (নিউজিল্যান্ড) : ফাইনালে ৫০ রানের বিনিময়ে ৩ টিসহ ২১ উইকেট নিয়ে টুর্ণামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছেন কিউই পেসার লোকি ফার্গুসন। ৯ ম্যাচে তার বোলিং গড় ছিল ১৯.৪৭। এর মাধ্যমে তিনি দলীয় সতীর্থ ১৭ উইকেট পাওয়া ট্রেন্ট বোল্টকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
জসপ্রিত বুমরাহ (ভারত ) : অদ্ভূত এক বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বুমরাহ স্টাইলিশ বোলার হিসেবে নিজেকে কখনই প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও গতি ও নি:খুতের দারুন সংমিশ্রনে তিনি ভারতের হয়ে সব সময়ই লাইমলাইটে এসেছেন। এবারের বিশ্বকাপেও ১৮ উইকেট নিয়ে তিনি ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন।