মাধ্যমিকে কারিগরি প্রকৌশল শিক্ষা বিষয় বাধ্যতামূলক হচ্ছে

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘কারিগরি প্রকৌশল শিক্ষা’ বিষয় বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ষষ্ট শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত— প্রতিটি শ্রেণিতে বিষয়টি পড়ানো হবে। কারিগরি ও প্রকৌশল বিষয়টি নিচের শ্রেণিতে প্রাক-বৃত্তিমূলক কোর্স এবং উঁচু শ্রেণিতে বৃত্তিমূলক কোর্স হিসেবে পড়ানো হবে। এসএসসি ও সমমান লেখাপড়ার পর যদি কেউ আর লেখাপড়া না করে, তাদের যেন বেকার না থাকতে হয়, সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত— প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে একটি ট্রেডে পড়াশোনা করতে হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল ও মাদ্রাসায়ও কারিগরি বিষয় পড়ানো বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক দফা বৈঠকও করে। গত ২৭ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সাধারণ শিক্ষা ধারায় প্রাক-বৃত্তিমূলক ও বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসএসসি/ভোকেশনাল কোর্স চালু করতে চাইলে সেই প্রতিষ্ঠানকে কোর্স চালুর অনুমোদন দেওয়া হবে। আর গত ২৭ জুলাইয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এই বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক (কারিকুলাম) এস এম শাহজাহান বলেন, ‘‘সাধারণ শিক্ষা ধারার প্রতিষ্ঠানে ‘কারিগরি প্রকৌশল শিক্ষা’ বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। ষষ্ট শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাক-বৃত্তিমূলক ও বৃত্তিমূলক কোর্স পড়ানো হবে। এসএসসি ও সমান পর্যন্ত লেখাপড়ার পর কেউ যদি লেখাপড়া না করে,তাহলে অন্তত ছোট চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্যতা তৈরি হবে। এছাড়া, মাধ্যমিকে লেখাপড়া করার সময় যে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে পড়তে চায়, তা নির্ধারণ করতে পারবে ‘কারিগরি প্রেকৌশল শিক্ষা’ বিষয়টি পড়ার মধ্যদিয়ে।’’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ)-এর আওতায় নির্বাচিত ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সাধারণ শিক্ষা ধারার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-বৃত্তিমূলক ও বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করতে অর্থ প্রয়োজন। অনেক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন হবে না। তবে বিদ্যমান কাঠামো অনুযায়ী দেশের তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে একটি আর্থিক বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২৪ হাজার নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এসব ভবনে ক্লাস চলতে সমস্যা হবে না। পাশাপাশি নতুন করে বিদ্যালয় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষা ধারার প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে।’
শিক্ষা তথ্য পরিসংখ্যান বুরো (ব্যানবেইস) ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৯ হাজার ২৫৭টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে এক হাজার ২৭৬টি। মোট মাদ্রাসা রয়েছে ৯ হাজার ২৯৫টি। এর মধ্যে দাখিল মাদ্রাসার (ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণি) সংখ্যা ৬ হাজার ৫৯৩টি।