বাজার অস্থিতিশীল করতে কিংবা কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিতে ব্যবসায়ীদের অজুহাত বা ছলচাতুরীর অভাব হয় না। বাজারে হঠাৎ করেই সয়াবিন তেল, চিনি, আদা, রসুনসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সয়াবিন তেল ও চিনির দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে আদার দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ৮০-৯০ টাকা দামের আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। রসুনের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মতো। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনির দাম ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী?
সাম্প্রতিক দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের অজুহাত হচ্ছে, বাজেটে এসব পণ্য আমদানি কর বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেশি পড়ছে। প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে আগে কর দিতে হতো দুই হাজার টাকা, ঘোষিত বাজেট প্রস্তাবে তা তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রতি টনে এক হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজিতে এক টাকা বেশি। এটি কার্যকর হবে বাজেট পাস হওয়ার পর। যত দূর জানা যায়, এখন বাজারে যে চিনি পাওয়া যায়, সেগুলো আমদানি করা হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। অপরিশোধিত চিনি ও তেল পরিশোধনের পর বাজারে আসতেও মাসখানেক সময় লাগে। তাহলে এমন অজুহাতে মূল্যবৃদ্ধি কেন? পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনিতে যে ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানো হয়েছে, তার জন্যও চিনির দাম এতটা বাড়তে পারে না। এই দাম বাড়ার আসল কারণ অতি মুনাফার অনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বা লোভ। সুযোগসন্ধানীদের এমন অনৈতিক মুনাফার লোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রের একাধিক সংস্থা রয়েছে। তারা কী করছে? যে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে, তার আমদানির কাগজপত্র দেখলেই তো আমদানিকারকদের ফাঁকি ধরা যায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, রাষ্ট্রের এসব সংস্থা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না অথবা অন্য কোনো অনৈতিক যোগসাজশে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিচ্ছে।
অতীতেও আমরা দেখেছি, রোজার মাসকে কেন্দ্র করে কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়ার অজুহাতে যখন-তখন দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কেউই খোঁজ নেয় না আন্তর্জাতিক বাজারে কতটা দাম বেড়েছে এবং স্থানীয় বাজারে কতটা বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, হঠাৎ করে বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীরা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম কিছু ব্যবসায়ীর গোপন কারসাজি। তাঁদের মতে, সরকার চাইলে এসব কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করা মোটেও কঠিন কাজ নয়। কিন্তু সেই চাওয়ায়ই ঘাটতি থাকে। আমরা চাই, অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।