কাজিরবাজার ডেস্ক :
হাতেকলমে যারা গাড়ি চালানোর নিয়ম-কানুন শেখাবেন, তারাই মানছেন না নিয়ম। তাদের নেই প্রয়োজনীয় মাঠ ও সনদপ্রাপ্ত দক্ষ ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক)। তাই তৈরি হচ্ছে অদক্ষ চালক। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, দক্ষ ড্রাইভার তৈরির জন্য ট্রেনিং সেন্টার খোলার পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নিজস্ব মাঠ থাকা। থাকতে হবে বিআরটিএর তালিকাভুক্ত ইন্সট্রাক্টর। কিন্তু বিআরটিএর তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ড্রাইভিং স্কুলেরই তা নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল অন্যের জমি নিজেদের প্রশিক্ষণ মাঠ বলে কাগজপত্র জমা দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন। এছাড়া অনুমোদন নেয়ার সময় যে ইন্সট্রাক্টর লাইসেন্স জমা দিয়েছেন তিনি প্রশিক্ষণের দায়িত্বে নেই। মূলত ড্রাইভিং স্কুলগুলো অদক্ষ ড্রাইভাদের সঠিক প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে টাকার বিনিময় লাইসেন্স করে দেয়ার কাজে সহযোগিতা করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার। আর তাই গত ১০ বছরে কেবল সড়ক দুর্ঘটনায় ঝড়ে গেছে ২৫ হাজার ৫২৬টি নিরীহ প্রাণ।
জানা গেছে, দক্ষ ড্রাইভার তৈরির জন্য সারাদেশে বিআরটিএর নিবন্ধিত ড্রাইভিং স্কুল রয়েছে ১২৮টি। এসব স্কুলে প্রশিক্ষণের জন্য বিআরটিএর তালিকাভুক্ত মাত্র ১৮৩ জন ইন্সট্রাক্টর রয়েছেন। আর বিআরটিএর হিসাব মতে, সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহন হচ্ছে ৪০ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৭টি। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্য ৩২ লাখ। এ বিপুল সংখ্যক গাড়ি চালানোর জন্য দেড়গুণের বেশি চালক থাকার কথা। চাকরির বাজারে ড্রাইভারদের কদরও রয়েছে বেশ। প্রতি বছর নিবন্ধিত হচ্ছে দেড় লাখ গাড়ি। অথচ প্রতি গাড়ির জন্য ১ দশমিক ৫ জন চালক দরকার। কিন্তু নিয়ম মেনে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ চালক তৈরির পর্যাপ্ত স্কুল নেই। অথচ পেশাদার ও অপেশাদার চালক হয়ে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে হলে অবশ্যই সবার আগে থাকতে হবে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর এ লাইসেন্সের রয়েছে শিক্ষানবিশ, পেশাদার, অপেশাদার, পিএসভি ও ইনস্ট্রাক্টর- এই পাঁচ প্রকারভেদ। তবে শিক্ষানবিশ, পেশাদার ও অপেশাদার লাইসেন্সই বেশি প্রচলিত।
এদিকে দক্ষ চালক সংকটকে পুঁজি করেই রাজধানীর আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ড্রাইভিং স্কুল। এসব ড্রাইভিং স্কুলের অধিকাংশই অবৈধ। নেই দক্ষ প্রশিক্ষক। নেই প্রশিক্ষণ উপযোগী যানবাহন। যেনতেনভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে চালকরা গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অনুমোদিত ড্রাইভিং স্কুলগুলোর ব্যানারে একাধিক ট্রেনিং সেন্টার খুলেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে শুধু ঢাকাতেই এ স্কুলের সংখ্যা ৫ শতাধিক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা এসব ড্রাইভিং স্কুলের বেশির ভাগেরই নেই ব্যবসায়িক বা প্রাতিষ্ঠানিক লাইসেন্স। প্রশিক্ষকের নেই প্রশিক্ষণ সনদ। অনেক জায়গায় আবার একজন সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকের বিপরীতে ৪-৫ জন অদক্ষ ও সনদহীন প্রশিক্ষক দিয়ে গাড়ি চালানো শেখানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে নেয়া হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
জানা গেছে, দেশের ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল বিআরটিএর শর্ত সাপেক্ষে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলই এখন পরিচালিত হচ্ছে অদক্ষ চালক দিয়ে। একজন সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকের বিপরীতে ৪/৫ জন অবৈধ ও অদক্ষ সনদহীন প্রশিক্ষক দিয়ে গাড়ি চালানো শেখানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, বাংলাদেশের বেশিরভাগ চালকই অদক্ষ। তাদের যেমন তাত্ত্বিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে, তেমনি গাড়ি চালানোর দক্ষতারও অভাব রয়েছে। শুধু গাড়ি চালানো শিখলেই দক্ষ চালক হবে, এটা আশা করা যায় না। দক্ষ চালক হতে হলে ড্রাইভিংয়ের পাশাপাশি গাড়ি সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। এজন্য হাতেকলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. লোকমান হোসেন বলেন, এ ধরনের স্কুল সম্পর্কে অভিযোগ এলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেট যান সেখানে। মামলা করে তারপর জেল-জরিমানা বা ফাইন যা করার দরকার আইন অনুযায়ী তা করেন।