লঙ্কানদের মুখোমুখি আজ ইংল্যান্ড

12

স্পোর্টস ডেস্ক :
চলতি বিশ্বকাপে হট ফেবারিট দল ইংল্যান্ড। আর শ্রীলঙ্কা কোন আলোচনাতেও নেই। এরপরও লঙ্কানরা টিকে আছে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে। এবার তাদের কঠিন পরীক্ষা স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আজ হেডিংলিতে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে দু’দলের লড়াই। জিতলেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে আসবে আবার ইংল্যান্ড। হারলেও তেমন ক্ষতি হবে না। আর লঙ্কানরা জিততে পারলে সেমির পথ কঠিন হলেও ছিটকে যাবে না। তবে জিতলে বেশ ভাল অবস্থানে যাবে লঙ্কানরা। সর্বশেষ তিনটি বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়ার মধুর স্মৃতি আছে তাদের। সেই বৃত্ত থেকে আজ বেরিয়ে আসতে মরিয়া হয়েই নামবে ইংল্যান্ড।
সর্বশেষবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ম্যাচটি খেলেছে ইংল্যান্ড, সেখানে ২১৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল। কলম্বোয় হওয়া সেই ম্যাচে দীনেশ চান্দিমালের নেতৃত্বে লঙ্কান যে দলটি খেলেছে তার অধিকাংশই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই। এমনকি অধিনায়কও এখন দিমুথ করুনারতেœ। আর সেই দলটিতে মাত্র ৩/৪টি পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলছে ইংলিশরা। ৫ ম্যাচের সেই সিরিজটি ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর টানা তিন ম্যাচ জিতে ইংলিশরা শেষ ম্যাচে বাজে সেই পরাজয়কে বরণ করেছিল। দু’দলের মধ্যে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের পরিসংখ্যান এটিই। সেই জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শ্রীলঙ্কা করুনারতেœর অধীনে টেস্ট সিরিজে জিতে বিস্ময়ের জন্ম দেয়। এ কারণে বিশ্বকাপে করুনারতেœকে নেতৃত্ব দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। তার অধীনে দারুণ ভাগ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছে লঙ্কানরা। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেও আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয় তারা। পরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছ থেকে এক পয়েন্ট করে ছিনিয়ে নেয় বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায়। সর্বশেষ ৬ দিন আগে ওভালে ফেবারিট অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয় লঙ্কানরা। তবে এই ৫ ম্যাচে ২ হারেও ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখন বেশ ভাল অবস্থানেই আছে তারা। টিকিয়ে রেখেছে সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা। সেদিক থেকে আজ ইংলিশদের বিপক্ষে জিততে পারলে সম্ভাবনাটা আরও উজ্জ্বল হবে তাদের। সর্বশেষ ম্যাচে ইংলিশদের হারানোর স্মৃতিটাই অনুপ্রাণিত করবে তাদের। সে জন্য দলগতভাবেই জ্বলে উঠতে হবে লঙ্কানদের। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস আর পেস বোলিংয়ে লাসিথ মালিঙ্গা দারুণ কিছু করতে পারলে শক্তিশালী ইংলিশদের কুপোকাত করা কঠিন হবে না।
শুধু পাকিস্তানের কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয় ছাড়া ইংলিশদের অভিযানটা দুর্দান্ত চলতি বিশ্বকাপে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশকে অলআউট করেছেন ইংল্যান্ডের বোলাররা। তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে পারেনি। এর মধ্যে আফগানদের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয় পেলেও তাই বোলিংটা নিয়েই কিছুটা চিন্তিত স্বাগতিকরা। ৫ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইয়ন মরগানের দল। ইনজুরি সমস্যায় ভোগা ইংলিশ অধিনায়ক সর্বশেষ ম্যাচে খেলবেন কিনা সংশয় ছিল। কিন্তু খেলেছেন এবং বেশকিছু রেকর্ড গড়ে ১৪৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তাই ওপেনার জেসন রয় এই ম্যাচেও অনুপস্থিত থাকলেও ব্যাটিং নিয়ে তেমন দুঃশ্চিন্তা নেই তাদের। কিন্তু ওপেনিংয়ে জেমস ভিন্সের কাছ থেকে আজ ভাল কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা থাকবে ইংল্যান্ডের। আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ভিন্স ধীরলয়ে মাত্র ২৬ রান করার পর সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে জনি বেয়ারস্টো দারুণ ইনিংস খেলেছেন। ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপে এরপর আছেন জস বাটলার, জো রুটরা। তারা দারুণ ফর্মে আছেন। চলতি আসরে রান করার দিক থেকে শীর্ষ ১০ ব্যাটসম্যানের তালিকায় আছেন রুট, মরগান, বেয়ারস্টো ও রয়। আর কার্যকর অলরাউন্ডার বেন স্টোকসও লঙ্কানদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবেন। এই ব্যাটসম্যানরা কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন শ্রীলঙ্কার দুই পেসার মালিঙ্গা ও নুয়ান প্রদীপকে মোকাবেলা করতে গিয়ে। এছাড়া লঙ্কান বোলিংয়ের হতশ্রী অবস্থাই বলা যায়। তবে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ে লেগস্পিনার আদিল রশিদ বাড়তি মাত্রা যোগ করেছেন। আগের ম্যাচেও তিনি ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে মঈন আলী অফস্পিনে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। কিন্তু পেস বিভাগে জোফরা আর্চার ও মার্ক উড ফর্মের তুঙ্গে আছেন। রশিদ, আর্চার, উডের আক্রমণে বিপর্যস্ত হতে পারে শ্রীলঙ্কা।
হেডিংলিতে চলতি আসরে এটিই প্রথম ম্যাচ। তাই দু’দলই জানে না এখানে আসলে কি অপেক্ষা করছে। তবে আগের ম্যাচগুলোয় আইসিসি যেমন উইকেট রেখেছিল, তাতে করে এখানেও ব্যাটসম্যানরাই সুবিধা পাবেন। তবে সেই সঙ্গে ঘাসের উইকেট থাকতে পারে এবং পেসাররা সুবিধা পেতে পারেন। সেদিক থেকে ফর্মে থাকা আর্চার ও উড দুর্দান্ত কিছু করবেন এমনটাই আশা করবে ইংল্যান্ড। এখন পর্যন্ত এ ভেন্যুতে চারবার মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড। সেখানে সমান দুটি করে জয় আছে উভয় দলের। কিন্তু লঙ্কানদের জন্য ভাল ব্যাপার হচ্ছে সর্বশেষ দুইবারই (২০০৬ ও ২০১১) এ মাঠে জিতেছে তারা। প্রথমবার ১৯৮৩ বিশ্বকাপে এখানে লঙ্কানদের ৯ উইকেটে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ৩৬ বছর পর আবার সেই মাঠেই বিশ্বকাপ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। আর শ্রীলঙ্কাকে সর্বশেষ এ মাঠে ইংলিশরা হারিয়েছিল ২০০২ সালে, ৩ উইকেটে জিতেছিল। কিন্তু সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫) জয় আছে শ্রীলঙ্কার। সবমিলিয়ে ১০ বার বিশ্বকাপ মঞ্চে মুখোমুখি হয়ে শ্রীলঙ্কার জয় অবশ্য সাকুল্যে ৪, আর ইংল্যান্ডের ৬। ওয়ানডে ইতিহাসে দু’দলের লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়েরই। ৭৪ ম্যাচের মোকাবেলায় ইংল্যান্ডের জয় ৩৬ আর শ্রীলঙ্কার ৩৫! আজ কি পরিসংখ্যানটা সমতায় আনতে পারবে লঙ্কানরা নাকি গত তিন বিশ্বকাপে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে এগিয়ে যাবে ইংল্যান্ড?