স্পোর্টস ডেস্ক :
রোদ্রোজ্জ্বল আকাশ থাকা মানেই বাংলাদেশের জয়! আর বৃষ্টিতে ভেজা উইকেট মানেই বাংলাদেশের ভয়! বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বেলাতে তাই হচ্ছে। তাতেতো আজও ভয় থাকতে পারে। আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস নেট দুনিয়া জানাচ্ছে, বৃষ্টির সম্ভাবনা কার্ডিফে আছে। সোফিয়া গার্ডেন্সে আজ দুপুর সাড়ে তিনটায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ শুরু হবে। শুরু থেকে তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এমন যদি সত্যিই হয়ে যায় তাহলেতো ইংল্যান্ড নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধা পেতে পারে। তখন এর আগে টানা দুই বিশ্বকাপে হারানো ইংল্যান্ড দলকে আবারও বধ করতে পারবে বাংলাদেশ? বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকবার ইংলিশদের হারাতে পারবে টাইগাররা?
আরেকবার ইংলিশ বধ খুবই সম্ভব। কার্ডিফে বাংলাদেশ দল পা রাখা মানেই যে সুখ অনুভূতি হওয়া। এ শহরে যে বাংলাদেশ শুধুই সুখস্মৃতি পেয়েছে। সেই শহরে পা রাখতেই আবার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছে। ক্রিকেটাররা ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। জয়ের শহরে যে এবার খেলা! যে শহরে শতভাগ সাফল্য কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে দুই ম্যাচ কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে খেলে দুটিতেই জিতেছে। ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচেই ৫ উইকেটের জয় মিলেছে। সবচেয়ে আশার বিষয়, ম্যাচ দুটি আবার জুন মাসেই হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৮ জুন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ জুন খেলা হয়েছে। এবারও জুন মাসেই খেলা আজ। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল হোক, ইংলিশদের খেলতে হবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। যে দলটি এর আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে এবং ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টানা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। সেই জয়গুলো আজও বাংলাদেশকে প্রেরণা দিয়ে যাবে। ইংলিশদের শক্তির জায়গা হচ্ছে ব্যাটিং। তা বোঝাই গেছে। বিশ্বকাপে দুই ম্যাচেই ৩০০ রানের বেশি করেছে ইংল্যান্ড। এই জায়গায় যদি কোনভাবে আঘাত করা যায়, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন, সাকিব, মিরাজ, মোসাদ্দেক মিলে যদি কোনভাবে রানের গতিতে লাগাম টেনে রাখতে পারেন তাহলেই চাপে পড়ে যাবে ইংল্যান্ড।
চাপে পড়লে ইংলিশরা ভুল করবে বেশি। ভুল হলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জাগবে। অবশ্য যদি বৃষ্টি হয় তখন টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যে দল টস জিতবে তারা আগে ফিল্ডিং করতে চাইবে। তখন বাংলাদেশ টসে জিতলে বোলিং দিয়ে ইংলিশদের বিপাকে ফেলতে পারবে। ঠিক যেমনটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটি বৃষ্টির জন্য যথাসময়ে শুরু হতে পারেনি। যখন শুরু হয়েছে তখন ভাগ্যক্রমে নিউজিল্যান্ড টসে জিতেও বাংলাদেশকে আগে ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানেই আটকে রেখেছিল বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশও বিপত্তিতে পড়েছিল। ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছিল। তবে দুই সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে ২২৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে জেতান। আগে বোলিং করতে পারায় কিউইদের কম রানে বেঁধে রাখায় শেষ পর্যন্ত জয় মিলে। আজও যদি সেই রকম হয়ে যায় তাহলে দুই ম্যাচে জয় হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আর যদি বৃষ্টি না হয়, রোদ্রোজ্জ্বল আকাশ থাকে, তাহলেতো কথাই নেই। রোদের হাসিমাখা আকাশ পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বধ করে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রোটিংয়াদের মতো ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিতে পারে টাইগাররা। বিশ্বকাপেতো ইংল্যান্ড বধ করার সম্ভাবনায় থাকা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এক নম্বরে থাকে এখন। ইংল্যান্ডও যখনই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা হয়, খুব সতর্কও থাকে। আজতো আরও বেশি সতর্ক ইংলিশরা। ইংল্যান্ড দুই ম্যাচ খেলে এক ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশও তাই। ইংলিশরাও হারিয়েছে প্রোটিয়াদের। বাংলাদেশও হারিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করে হেরেছে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশেরও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াকু হার হয়েছে। মুশফিক যদি ভুল করে রান আউট না হতেন তাহলে হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকমও হতে পারত। ইংল্যান্ড যতই বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার দল হোক, এ মুহূর্তে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড একই অবস্থানে আছে। ইংল্যান্ড পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেটতো আবার বাংলাদেশকে নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে আছেন। তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের জয় এখন আর অঘটন নয়, তারা শক্তিশালী। তারা যেদিন ফর্মে থাকে সেদিন যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশ কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। ওই জয়কে মোটেও অঘটন বলা যায় না। বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৯ সাল পর্যন্ততো বাংলাদেশ পাত্তাই পেত না বলা চলে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের একটি ম্যাচেও হারে বাংলাদেশ। ২০১০ সাল থেকে সেই ধাঁধার নিষ্পত্তি হতে থাকে। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার হারায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ থেকে আট ম্যাচ খেলে চারটিতেই জিতে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে হারের পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগেতো বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন ওয়ানডে ম্যাচ খেলেইনি ইংল্যান্ড। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে যখন খেলতে নামে তখনও ইংল্যান্ড হারে। টানা দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ইংল্যান্ডের হার হয়। আজ যদি আবার ইংল্যান্ডকে হারানো যায় তাহলে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে টানা তিনবার, হ্যাটট্রিকবার হারানোর স্বাদ পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি যদি আসে আর নিউজিল্যান্ড ম্যাচের মতো বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিং করতে হয় তাহলেইতো ভয়! তখন কী ইংল্যান্ডকে হ্যাটট্রিক হারের স্বাদ দিতে পারবে বাংলাদেশ?