কাজিরবাজার ডেস্ক :
শিক্ষিত বেকারের হার কমিয়ে আনতে কর্মসংস্থানমুখী বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুফল পাবে সাধারণ জনগণ। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যাতে শহরে ছুটতে না হয়, সেজন্য বাজেটে গ্রামবান্ধব কর্মসূচীতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেয়া হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগে। এ লক্ষ্যে ভ্যাট ও কর না বাড়িয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিয়ে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বাড়ানো হবে সরকারী বিনিয়োগ। আগামী ১৩ জুন বৃহস্পতিবার মহান সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে নতুন করে কর ও ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে না। করের আওতা বাড়ানো হবে। যাদের সত্যিকার অর্থে কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই কর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনবল বাড়ানোসহ কর ও ভ্যাট আদায়ে অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। পড়াশোনা শেষ করে কর্মসংস্থানে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু দেশে সেভাবে চাকরির বাজার গড়ে উঠছে না। ফলে উচ্চ শিক্ষিতদের একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের বাইরে রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে চাকরি দিতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুফল কাজে লাগাতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং মনে করে, অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুফল শীঘ্রই পেতে শুরু করবে দেশের জনগণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় প্রবৃদ্ধির সুফল পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। টানা দশ বছরে দেশে বড় বড় প্রকল্পে সরকারী বিনিয়োগ বেড়েছে।
বিশেষ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বেসরকারী খাতে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের শেষদিকে চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক শিল্পায়নের সুযোগ তৈরি হবে। কর্মতৎপরতা বাড়বে পায়রা ও মংলাবন্দরে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ও কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হলে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক সাফল্যের দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বিপুল পরিমাণ শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে বলেন, প্রতিটি বাজেটেই কর্মসংস্থানের বিষয়টি থাকে। এবারও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের জন্যই তো সরকারের এত চেষ্টা ও উদ্যোগ। ধারাবাহিকভাবে অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুফল পাবে এদেশের মানুষ। পদ্মা সেতু ও কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল আগামী অর্থবছরের মধ্যেই চালু হবে। এছাড়া দশ মেগা প্রকল্পের সবই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হলে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয়, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় যারা সুবিধা ভোগ করছেন সেসব পরিবারের অন্তত একজনকে চাকরি দেয়ার একটি কৌশল সরকারের রয়েছে। নতুন বাজেটে এসব বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচী বাস্তবায়নে। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারী-বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।
আসন্ন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের চেয়েও বেশি। এছাড়া প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিনিয়োগ ও রফতানিতে বাংলাদেশের অনেক পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাজেটেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবছর বাড়ছে বাজেটের আকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-’২১ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বাজেটে। ওই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে কাতারে নিয়ে যাওয়া এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী এক শ’ বছরে কোন্দিকে যাবে বাংলাদেশ সেজন্য করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এবারের বাজেটে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এছাড়া এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। চলতি বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যেই বাজেটের ঘাটতি রাখা হয়েছে।
আসন্ন বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগও এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাজেট উপস্থাপনা করা হয়েছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। আগামী ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী মহান সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এবারের বাজেটে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে গ্রামকে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুত, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত ঘোষণা থাকবে বাজেটে।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে রফতানি বাড়ানো ও রেমিটেন্স আহরণে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে। বৈধ পথে রেমিটেন্স আনা হবে। এছাড়া টাকা পাচাররোধে কঠোর উদ্যোগ নেবে এনবিআর। কর ও ভ্যাট হার না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানো হবে। বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হচ্ছে। অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে না। এছাড়া পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকারী কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা হবে।