এটিএম সেবার নিরাপত্তা

30

এখন টাকা তোলা কত সোজা। অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথে কার্ড ঢুকিয়ে বোতাম টিপে এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যে টাকা তোলা সম্ভব। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও আবাসিক এলাকার কাছাকাছি, এমনকি অনেক গ্রামাঞ্চলে মানুষের একেবারে হাতের নাগালেই কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম বুথ স্থাপন হওয়ায় অর্থ উত্তোলনে খুবই সুবিধা হয়েছে। প্রযুক্তির শুধু সুফল পাবে মানুষ, এমন তো নয়। কিছু কিছু কুফলে পা আটকে যায়- এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় কতিপয় ক্রিমিনাল বা অপরাধীর কারণেই। বিগত বছরগুলোয় অনেক বুথে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যাতে গ্রাহকদের নিরাপত্তাও হয়েছে হুমকির সম্মুখীন। শুধু গ্রাহক নয়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষও দুর্বৃত্তের দুষ্কর্মের শিকার হয়েছে। এটিএম বুথে টাকা লোড করার সময় লুটেরারা আক্রমণ চালিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এরপর ঘটল কার্ড জালিয়াতি। ২০১৬ সালে তিনটি ব্যাংকের চার এটিএম বুথ থেকে তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে বিদেশীরা। ওই সময় ৪০টি কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। ২০১৮ সালে রাজধানীর একটি সুপারশপ থেকে গ্রাহকদের তথ্য চুরি হয়। ক্লোন কার্ড তৈরি করে ৪৯ গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়।
সর্বশেষ ঈদ-উল-ফিতরের আগে অভিনব জালিয়াতি হয়েছে, যা দুর্ভাবনার বিষয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রাজধানীর বাড্ডার এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা হলেও এর কোন রেকর্ড ব্যাংকের সার্ভারে নেই। এমনকি কোন গ্রাহকের হিসাব থেকেও টাকা কমে যায়নি। এমনটি আর কখনও দেখা যায়নি। এর আগে যতবারই এটিএম থেকে টাকা চুরি হয়েছে, প্রতিবারই গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেছিলেন জড়িত ব্যক্তিরা। প্রতিবারই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবারের ঘটনায় পুরো এটিএম বুথের নিয়ন্ত্রণ নেন জড়িত বিদেশীরা। এতে দেশের এটিএম সেবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৫৩৬টি। পয়েন্ট অব সেলস রয়েছে ৪৯ হাজার ৬২টি। দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৫১টি ব্যাংক কার্ড সেবার সঙ্গে যুক্ত। ব্যাংক মানুষের অর্থ সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ফলে যে কোন মাধ্যমেই হোক না কেন, গ্রাহকের অর্থ খোয়া গেলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। অবকাঠামো, কার্ড ও তথ্যভান্ডার নিরাপত্তায় উপযুক্ত প্রযুক্তির অনুপস্থিতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জালিয়াত চক্র যেভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা আজ কিছুটা প্রশ্নের সম্মুখীন।
আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের অত্যাধুনিক জালিয়াতি রুখতে হলে এটিএম নিরাপত্তা নিয় অচিরেই নতুন ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রতিক অভিনব এটিএম জালিয়াতির হোতা ছয় বিদেশী জালিয়াত এখন আইনের হেফাজতে আছে। তাদের কাছ থেকে এই অপকর্মের প্রযুক্তিগত পদ্ধতির খুঁটিনাটি জানা গেলে তা প্রতিরোধের কৌশলও উদ্ভাবন করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এছাড়া আগামীতে অধিকতর সুরক্ষার উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই। বলাবাহুল্য, এটিএম সেবার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা হালনাগাদ করতে হবে।