ঈদযাত্রা নিরাপদ হোক

38

সিয়াম সাধনার মাস রমজানের মাঝামাঝি থেকিই ঈদ উৎসবের যে আমেজ জনগোষ্ঠীর মাঝে সাড়া জাগায় তার সর্বকিষ অবস্থা দৃশ্যমান হয় ঘরমুখো মানুষের দীর্ঘযাত্রাপথ পাড়ি দেয়ার মাধ্যমে। ঈদযাত্রার শুরুতেই প্রথম ধাপ কষ্ট পোহাতে হয় টিকিট সংগ্রহের মধ্য দিয়ে। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে যাত্রার যে লক্ষ্যমাত্রা সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজস্ব নিয়ম ও বিধিতে টিকিট বিক্রি শুরু করে। আগাম টিকিট বিক্রির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও হরেক রকম বিপত্তিও মোকাবেলা করতে হয় যাত্রীদের। সকাল থেকি দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, কিছুক্ষণের মধ্যে টিকিট কিষ বলে কর্তৃপক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়া ঈদযাত্রার এক মহাবিড়ম্বনা। এরপর কালোপথে চড়া দামে টিকিট কিনা সেও এক অলিখিত নিয়ম। সরকার প্রতি বছর ঈদ উৎসবে যারা কিকড়ের সন্ধানে গ্রামের বাড়ি যেতে চায় তাদের ভোগান্তি কমাতে অতিরিক্ত পরিবহন সংযুক্ত করে। তারপরও কিছু অসাধু চক্র টিকিট সঙ্কট তৈরি করে তাদের রমরমা ব্যবসাকি জিইয়ে রাখে। যাত্রীদেরও কিান উপায় থাকি না এমন অপকিৗশল থেকি রেহাই পাওয়ার। টিকিট পাওয়ার আনুষঙ্গিক পর্ব পার হওয়ার পর সামনে এসে যায় গ্রামে যাওয়ার দীর্ঘ পথযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। এমন যাত্রা প্রায়শই সুখকর কিংবা আরামদায়ক হয় না। দীর্ঘ যানজট, যাত্রী হয়রানি, চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোÑ সব মিলিয়ে এমন এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়, যাতে ঈদের আনন্দই মাটি হওয়ার যোগাড়। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, অদক্ষ চালক, অপরিকল্পিত সড়ক-মহাসড়কির দুর্ভোগ সব মিলিয়ে যে অসহনীয় সঙ্কটের আবর্তে পড়তে হয় তা যেন এক বিভীষিকাময় দুঃসহ সময় পার করা।
তবে এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কির চন্দ্রা মোড়ের যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ তা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। মেঘনা-গোমতীতে উড়াল সড়ক, সেতু এবং আন্ডার পাস উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী ঈদ যাত্রাপথে যে যুগান্তকারী উপহার দিলেন তার প্রিয় দেশবাসীকি তা ঈদের আগেই সুফল দিতে শুরু করেছে। যে জায়গায় তীব্র যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকতে হতো সেখানে দৃশ্যপট একিবারে ভিন্নমাত্রার। একইভাবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের কিন্দ্র চন্দ্রার মোড়ও ছিল যানজটের এক অকল্পনীয় সারি। সেখানেও উড়াল সড়ক, সেতু এবং আন্ডার পাস তৈরি হওয়ায় জনদুর্ভোগ আর অসহনীয় হওয়ার সুযোগ থাকছে না। তবে এবার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাতে আইনী নজরদারি বাড়ানো হলেও যাত্রাপথ কি নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এমন সব বিধি-ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হলেও জনসচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরী। বিকিষ করে চালকদের সংযত আচরণ, আইন মেনে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ- এসবও সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ঈদের ছুটি দীর্ঘ হলেও পেশাজীবীরা আরও বাড়তি ছুটি নিয়ে দেকির বাড়িতে আনন্দে কাটাতে চায়। এরপর ফেরার পালা। সে যাত্রাও যেন মোটেই দুর্বিষহ না হয় তেমন প্রত্যাশা থাকল। সব মিলিয়ে উৎসব, আনন্দ আর আয়োজনে ঈদযাত্রার সুবর্ণ সময়গুলো মানুষ নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে কাটাক এমন শুভ কামনা রইল।