লোকসান থেকে কোনোভাবেই বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। লোকসান কমাতে অতীতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের সংখ্যা। কিন্তু দেশের জনপ্রিয় এই যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাকে লোকসান থেকে টেনে তোলা যায়নি। রেলওয়ের জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে বর্তমান সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া রেললাইন নতুন করে চালু করেছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক স্টেশন ও ট্রেন। নতুন রেলপথ নির্মিত হয়েছে। অনেক রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেলপথ যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সরকার রেলওয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যথেষ্ট আন্তরিক ও যতœশীল। কিন্তু এত কিছুর পরও লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ১৪২ ট্রেনের মধ্যে ৩৪টি পরিচালিত হয় ইজারার ভিত্তিতে। এই ৩৪টি ট্রেন থেকে রেলওয়ে বছরে লাভ করছে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পরিচালনায় যে ১০৮টি ট্রেন চলছে, তা থেকে বছরে আয় হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু এই টাকা আয় করতে গিয়ে রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। লিজ বা ইজারা দেওয়া ট্রেনগুলোর বেশির ভাগই লক্কড়ঝক্কড় মার্কা লোকাল ও মেইল ট্রেন। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী এসব ট্রেনে যাত্রীরা উঠতে চায় না বলেই ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব ট্রেন থেকেই রেলওয়ে লাভ করছে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১০৮টি ট্রেনের মধ্যে আছে আন্ত নগর, মেইল ট্রেন, বিরতিহীন, আন্তর্জাতিক এক্সপ্রেস ট্রেন ও লোকাল ট্রেন।
সরকারের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও রেলওয়ে লোকসান গুনছে কেন? অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, লুটপাট ও দুর্নীতির কারণেই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে লাভের মুখ দেখতে পারছে না। আন্ত নগর ও মেইল ট্রেন থেকে শুরু করে লোকাল ট্রেনেও যাত্রীর অভাব নেই। টিকিট পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও কেন লোকসান গুনতে হবে? রেলওয়ের অভ্যন্তরে যে দুর্নীতিগুলো আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দূর করা গেলে লাভের মুখ দেখা কঠিন হবে না। অন্যদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণেও রেলওয়ে লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। লুটপাট ও দুর্নীতি দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে বেরিয়ে আসবে ঐতিহ্যের বাংলাদেশ রেলওয়ে।