অনেক এলাকায় কৃষকরা, বিশেষ করে দরিদ্র কৃষকরা যে দামে ধান বিক্রি করছে তাতে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার কারণ হয়েছে। সংসদীয় কমিটিও ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য তাগাদা দিয়েছে। সরকার কিছু কিছু ব্যবস্থাও নিচ্ছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি চাল আমদানি নিরুৎসাহ করতে শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে অনেক দেরিতে। দরিদ্র কৃষকরা এরই মধ্যে তাদের ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে গত ১০ মাসে তিন লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করা হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে ধান-চালের বাজারে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরো আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
প্রায় প্রতিবছরই উৎপাদন মৌসুমে একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। সরকার ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে সরাসরি ধান ক্রয় করতে পারে খুবই কম। সেই সুযোগ নেয় চালকল মালিক, আড়তদার, ফড়িয়া তথা মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা নানা কৌশলে কৃষককে বাধ্য করে সবচেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে। অবস্থাপন্ন কৃষকরা এ সময় ধান বিক্রি না করেও থাকতে পারে কিন্তু সমস্যা হয় দরিদ্র কৃষকদের। ফলে সরকার বেশি দামে ধান-চাল কিনলেও দরিদ্র কৃষকরা তাতে লাভবান হয় না। এ বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেকেই মনে করেন, দেশে খাদ্যগুদামের সংখ্যা ও ধারণক্ষমতা অনেক বাড়াতে হবে। এবার সরকারের ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ লাখ টন। সরকারি গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা হচ্ছে ২১ লাখ টন। এসব গুদামে আগে থেকেই মজুদ আছে সাড়ে ১২ লাখ টন। ১৩ লাখ টন সংগৃহীত হলে তা দাঁড়াবে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় চার লাখ টন বেশি। এ অবস্থায় সরকার চাইলেও কৃষকদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি ধান কিনতে পারবে না। আবার অনেকে মনে করেন, দরিদ্র কৃষকদের বিক্রিযোগ্য ধানের অনুপাতে ব্যাংকগুলো যদি দু-তিন মাসের জন্য সামান্য সুদে বা বিনা সুদে ঋণ দেয়, তাহলে দরিদ্র কৃষকরা এত কম দামে ধান বিক্রি না করে কিছুদিন ধরে রাখতে পারবে। স্থানীয় সমবায় সৃষ্টির মাধ্যমেও এ কাজটি করা যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
কৃষকরাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। তাদের বঞ্চিত করে দেশ এগোতে পারে না। রাষ্ট্রকেই কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করি, প্রয়োজনে বিশেষ কমিটি গঠন করে এ সমস্যার সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করা হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।