কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
কুলউড়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের দখলে। এই চক্রের সাথে জড়িত খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নি¤œ পর্যায়ের কর্মচারী, আনসার সদস্য, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কতিপয় দালাল। নিয়ম অনুযায়ী ১০ দিন আগে টিকিট ছাড়া হয় কাউন্টারে। কিন্তু টিকিট ছাড়ার ২ ঘন্টার মধ্যে সব টিকিটই নামে বেনামে কিনে নেয় ওই সব কালোবাজারীরা। পরে দালালদের কাছ থেকে প্রতি টিকিটে ২০০/৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয় যাত্রীদের। এ কারণে ভোগান্তিতে রয়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, রেলওয়ে কর্মচারী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কতিপয় দালাল দিনে-দুপুরে ষ্টেশনের প্লাটফর্মে টিকিট বিক্রি করছেন। সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থেকে নির্দ্বিদায় তারা এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার এটাকে ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করেছেন। এ সকল দালালদের কুটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন সাধারণ যাত্রীর মধ্যে।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট রেলপথে আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস, জয়েন্তিকা, কালনী ও উপবন এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস চলাচল করে। মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে দুটি আন্তঃনগর রেলওয়ে ষ্টেশন। ওই দুই ষ্টেশন দিয়েই পুরো জেলার যাত্রী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম যান। এমনকি হবিগঞ্জের অধিকাংশ লোক শ্রীমঙ্গল ষ্টেশন ব্যবহার করেন। যার কারণে টিকিটের অনেক চাহিদা রয়েছে ওই ২ ষ্টেশনে। বরাদ্দকৃত টিকিট দিয়ে চাহিদার দশ ভাগের এক ভাগই পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তার পরেও টিকিট নিয়ে চলছে পুকুর চুরি।
এবিষয়ে ট্রেন যাত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি টিকিট বেশি টাকা দিয়ে কালোবাজারীর কাছ থেকে কিনতে হয়। শাহাজান আহমদ মামুন বলেন, কুলাউড়া ষ্টেশনে থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। কিন্তু প্রতি টিকিটে ১৫০/২০০ টাকা বেশি দিলে দালালদের কাছ থেকে টিকিট পাওয়া যায়। মাছুমুর রহমান মাছুম বলেন, ষ্টেশন কাউন্টারে গেলে টিকিট পাওয়া যায় না। তবে বাহিরে কয়েকজন লোকের কাছে বেশি টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। নাম গোপন রাখার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ১০০/২০০ টাকা বেশি দিলে যে কোনো সময় টিকিট পাওয়া যাবে। কুলাউড়া ষ্টেশন নিয়ে একই কথা বলেন, শেখ জায়েদ, জামিল আহমদ মহন, ডাঃ ময়নুল ইসলাম ও এফরুল ইসলমা রুহিন। শ্রীমঙ্গল ষ্টেশন সম্পর্কে জসিম উদ্দিন নামের এক প্রভাষক বলেন, কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা। নাম গোপন রাখার শর্তে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, দালাল চক্র ছাড়া এখানে টিকিট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই কথা বলেন কমলগঞ্জ উপজেলার মুজিবুর রহমান ও আনসার আলী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুলাউড়ায় টিকিট কালোবাজারের গডফাদার আনসার সদস্য বাহার ও ষ্টেশন পেটার রাজু। সাংবাদিকের নাম ভাঙ্গিয়ে রাহেলা বেগম নামের এক মহিলাও রমরমা টিকিট কালোবাজারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, রাহেলা বেগমের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ২০ মে’র ঢাকাগামী উপবন ট্রেনের ২টি টিকিট চাইলে তিনি ২ হাজার টাকা দাবি করেন। রাহেলা বলেন, ওই নাম্বারে (০১৭১১-৩৮৮৬৩৯) বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। রাতে এসে পৌরসভার সামন থেকে নিয়ে যাবেন। শ্রীমঙ্গল ষ্টেশনে টিকিট কালোবাজারের সাথে জড়িত সহকারী ষ্টেশন ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি সূত্র বলছে, একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে থামানো যাচ্ছে না।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, এ বিষয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।
কালোবাজারে টিকিট বিক্রির কথা স্বীকার করে কুলাউড়া ষ্টেশন মাষ্টার আফসার উদ্দিন বলেন, এরা সিলেট থেকে টিকিট এনে এখানে বিক্রি করে। তবে আমার ষ্টেশনের কোনো টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হয় না এবং আমার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এটার সাথে জড়িত নয়।